আদালত
প্রতীকী ছবি

নাটোরে শিশু পাচারের ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই নারীকে আজ রোববার বিকেলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

নাটোর সদর থানা–পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার নার্সের ছদ্মবেশে নাটোর সদর হাসপাতাল থেকে এক নবজাতক চুরি করে পালিয়েছিলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ গ্রামের আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোছা. কাজলী (৩০)। পুলিশ গতকাল শনিবার সকালে তাঁর কাছ থেকে তথ্য পেয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খাজানগর গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী কাজলী খাতুনের (৪২) কাছ থেকে চুরি হওয়া শিশুকে উদ্ধার করে। একই সময় পুলিশ ওই দুই নারীকে গ্রেপ্তার করে সদর থানায় নিয়ে আসে।

আজ সকালে পুলিশ তাঁদের নিয়ে শনাক্তকরণ মহড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে ওই শিশুর মা, দাদিসহ সদর হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যুক্ত করা হয়। তাঁরা কাজলীকে চোর হিসেবে শনাক্ত করেন। মহড়া শেষে গ্রেপ্তার দুই নারী পুলিশ কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগী শিশুর স্বজনদের সামনে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেন। তাঁরা আদালতে গিয়ে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেবেন বলেও জানান। সে মোতাবেক তাঁদের আজ দুপুরে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রওশন আলমের আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সাজ্জাদ হোসেন আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। অথচ আদালতের খাসকামরায় আসামিদ্বয়কে হাজির করা হলে তাঁরা দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে অসম্মতি জানান। পরে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

নাটোর সদর আমলি আদালতের জিআরও খাদেমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা পুলিশের কাছে দোষ স্বীকার করলেও আদালতে এসে তা অস্বীকার করেছেন। স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে অসম্মতি জানানোর ফলে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। গ্রেপ্তার প্রধান আসামি আরিফুলের স্ত্রী কাজলী বর্তমানে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাঁর কোলে তিন বছরের একটি কন্যাশিশু আছে। অপর আসামি কাজলী খাতুন একজন নিঃসন্তান। তিনি আট হাজার টাকায় চুরি যাওয়া শিশুটিকে কিনে নিয়েছিলেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহমেদ বলেন, সবার সামনে সবকিছু স্বীকার করার পরও আসামিরা আদালতে গিয়ে অস্বীকার করেছেন। তাঁরা ধুরন্ধর প্রকৃতির। তাঁদের ব্যাপারে আরও গভীরভাবে তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে তদন্তে পাওয়া গেছে, প্রধান আসামি মোছা. কাজলী একসময় কুষ্টিয়ার একটি ক্লিনিকে আয়ার কাজ করতেন। পরে তিনি স্বামীর সঙ্গে নাটোর স্টেশনের পাশে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। টাকার লোভে তিনি হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি করে বিক্রি করেছিলেন।

এদিকে আজ সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় শিশু পাচারের ঘটনা গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়। দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধারে পুলিশকে ধন্যবাদ জানানো হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে হাসপাতালে শিশু বহনের জন্য বিশেষ পাস কাছে রাখতে হবে। হাসপাতালে কর্তব্যরত সবাইকে নির্ধারিত পোশাক পরিধান করতে হবে। ঘটনার সময় দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের ভূমিকা কী ছিল, তা–ও তদন্ত করে দেখা হবে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার সভায় উপস্থিত ছিলেন।