ঘোষণা দিয়ে বন্ধ ক্যাম্পাসে ঢুকছেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী খুলনা প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেছেন। আজ রোববার বেলা দুইটা দিক থেকে শিক্ষার্থীরা দুই–একজন করে, কখনো আবার ছোট ছোট দলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা নতুন করে কেউ এলে আগে থেকে জড় হওয়া শিক্ষার্থীরা হাততালি দিয়ে তাঁদের স্বাগত জানান।
বেলা তিনটার দিকে রোকেয়া হলের প্রভোস্ট আশরাফুল আলম, ছাত্রকল্যাণ–বিষয়ক দপ্তরের সহকারী পরিচালক সহকারী অধ্যাপক রাজন রাহাসহ কয়েকজন শিক্ষক এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান এবং ক্যাম্পাসের ভেতরে না ঢুকতে অনুরোধ করেন। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান এবং তাঁরা ভেতরে ঢুকতে চান। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা নিয়েও তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এক পর্যায়ে শিক্ষকেরা আইডি কার্ড দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের ভেতরে প্রবেশ করতে বলেন। শিক্ষার্থীরা বেলা তিনটার দিকে আইডি কার্ড দেখিয়ে একে একে ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করেন।
এর আগে শিক্ষার্থীরা বন্ধ থাকা ক্যাম্পাসে আজ রোববার ফিরে সবাই একসঙ্গে হলে ওঠার ঘোষণা দেওয়ায় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা তৈরি হয়। শিক্ষার্থীরা যাতে বন্ধ ক্যাম্পাসে না ফেরে, সে ব্যাপারে তৎপরতা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাধিক সভা, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি, বিজ্ঞপ্তি জারি ও অভিভাবকদের মোবাইলে খুদে বার্তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রবেশ ঠেকাতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ দিকে এই উত্তেজনায় নতুন রসদ জুগিয়েছে একটি মামলা। কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেছেন নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার মো. হোচেন আলী নামের এক ব্যক্তি। আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে খানজাহান আলী থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল শনিবার ওই মামলার বিষয়ে জানাজানি হয়।
বাদী তাঁর অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তিনি কুয়েট রোড দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। পকেট গেটের সামনে গেলে আসামিরা তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করে এবং স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়।
কুয়েটের শিক্ষার্থীরা বলছেন, কুয়েট প্রশাসন বাইরের একজনকে উসকানি দিয়ে তাকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে একসঙ্গে ক্যাম্পাসে ঢুকবেন। তাঁরা যাতে ক্যাম্পাসে ফিরতে না পারেন, সে জন্য কুয়েট কর্তৃপক্ষ নানা তৎরপতর চালাচ্ছে। ২২ জন কুয়েট শিক্ষার্থীর নামে ও অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জন রেখে মামলা দিয়ে হয়রানি করা এবং যৌক্তিক আন্দোলন দমানোর অপচেষ্টা। প্রশাসন ও তদন্ত কমিটির যোগসাজশেই এই প্রহসন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটিও করা হয়েছে। ওই দিন রাতেই খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।