অসহনীয় যানজটে ভোগান্তি

অবৈধ অটোরিকশার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এগুলো সড়কে যত্রতত্র দাঁড় করিয়ে রাখায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কয়েক লাখ মানুষ।

সড়কের যত্রতত্র অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখায় গাইবান্ধা শহরে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার শহরের ব্যস্ততম ব্রিজ রোডেছবি: প্রথম আলো

সুমন মিয়া একজন অটোরিকশাচালক। বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার চাপাদহ গ্রামে। প্রতিদিন জেলা শহরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। তিনি জানালেন, ‘প্রতিদিন রাতে ব্যাটারি চার্জ দিই, দিনে অটোরিকশা চালাই। সারা রাত চার্জ দিয়ে সারা দিন অটোরিকশা চালানো যায়। কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু যানজটের কারণে হাঁপিয়ে উঠেছি। ৫ মিনিট চালালে ২০ মিনিটই জ্যামে (যানজটে) আটকে থাকতে হয়। দুপুরের পরই ব্যাটারি চার্জ শেষ হয়ে যায়।’ গত বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা শহরে ২০ জন অটোরিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে যানজটের এই ভয়াবহ অবস্থার কথা জানা গেছে।

গাইবান্ধা শহরের কয়েকজন বাসিন্দা ও অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত তিন কারণে গাইবান্ধা শহরে যানজট বেড়েছে। এগুলো হচ্ছে অতিরিক্তসংখ্যক অটোরিকশা চলাচল, যততত্র অটোরিকশা রেখে যাত্রী ওঠানো–নামানো এবং বিশৃঙ্খলভাবে অটোরিকশা চলাচল। এসব কারণে জেলা শহরের ব্যস্ততম ডিবি রোড, বালাসি রোড়, ব্রিজ রোড এবং প্রধান ডাকঘর–সংলগ্ন রোডে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। যানজটের কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছে কয়েক লাখ মানুষ।

ব্যস্ততম সড়কের মোড়গুলোয় যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। রিকশায় উঠলেই খারাপ লাগে। যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠি।
নুর মোহাম্মদ, ব্যবসায়ী

গাইবান্ধা জেলা শহরে কতগুলো অটোরিকশা চলাচল করে, সে হিসাব গাইবান্ধা পৌরসভা কার্যালয়ে নেই। তবে পুলিশ, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন জেলা শহরে চার হাজারের বেশি অটোরিকশা চলাচল করে। এর মধ্যে অধিকাংশেরই নিবন্ধন নেই। এ ছাড়া শহরে তিন হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান চলাচল করে।

 জেলা রিকশা ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়াশিম আলম বলেন, গাইবান্ধা শহরের যানজট সমস্যার সমাধানে দিনরাত দুই পালায় অটোরিকশা চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। যাঁরা দিনে চালাবেন, তাঁরা রাতে চালাতে পারবেন না। এতে যানজট অনেকটা কমবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের ব্যস্ততম সড়কের পাশে ট্রাক, অটোরিকশা দাঁড়িয়ে আছে। বিভিন্ন মোড়ে আটকে আছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান। ফলে কিছুক্ষণ পরপর সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। দুইপাশে যত্রতত্র যানবাহন রেখে বিভিন্ন সড়ক সংকুচিত হয়েছে। ফলে পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

গাইবান্ধা শহরের ডিবি রোডের  ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘শহরে অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। ব্যস্ততম সড়কের মোড়গুলোয়  যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। রিকশায় উঠলেই খারাপ লাগে। যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠি।’ তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর কিছুদিন ছাত্ররা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে। তখন শহরের অবস্থা ভালো ছিল। এখন ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও যানজট কমছে না।

শহরের ব্রিজ রোডের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক মুকুল মিয়া বলেন, উত্তর দিক থেকে গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২০টি ইউনিয়নের আট  লক্ষাধিক মানুষ শহরে প্রবেশ করেন।  ফলে এ রোডে দিনরাত যানজট লেগেই থাকে।

একই রোডের রিকশাচালক বাবু মিয়া (৫৫) নিজের ভাষায় বললেন,  ‘পোত্তেকদিন (প্রতি দিন) বিরিজ রোডোত  জাম নাগি থাকে। জামের জন্নে ভাড়া কমি গ্যাচে।’

 শহরের পুরাতন বাজারের ব্যবসায়ী এমদাদুল হক (৬৫) জানালেন, সড়ক ঘেঁষে দোকান। দিন–রাত অসংখ্য  যানবাহন চলাচল করে। শব্দদূষণে কান জ্বালাপোড়া করে।

শহরের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নির্দিষ্ট রঙের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হবে। চিহ্নিত অটোরিকশা কেবল শহরে চলাচল করবে।
শহীদ আহমেদ, প্যানেল মেয়র, গাইবান্ধা পৌরসভা

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের পুস্তক ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বললেন, সপ্তাহে তিন-চার দিন ব্রিজ রোড হয়ে জেলা শহরে আসতে হয়। যানজটের কারণে দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকে না।

গাইবান্ধা জেলা ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক পরিদর্শক শাহ আলম বলেন, সড়কের যানজটের অন্যতম কারণ হলো, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি। এ ক্ষেত্রে পৌরসভার নিবন্ধন করা অটোরিকশা ও রিকশা চিহ্নিত করা দরকার। এতে বাইরের অটোরিকশা শহরে ঢুকতে পারবে না। তখন যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের কাজ করতে সুবিধা হবে। বিষয়টি একাধিকবার পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এসব বিষয়ে গাইবান্ধা পৌরসভার প্যানেল মেয়র শহীদ আহমেদ বলেন, যানজট নিরসনে পৌরসভা থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। শহরের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা একটি নিদির্ষ্ট রঙের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হবে। চিহ্নিত অটোরিকশা কেবল শহরে চলাচল করবে। এতে যানজট অনেকটা কমে যাবে।

দিনে রাতে পালা করে চলাচল প্রসঙ্গে গাইবান্ধা পৌরসভার প্যানেল মেয়র শহীদ আহমেদ বলেন, ‘এক রঙের  অটোরিকশা রাতে, আরেক রঙের অটোরিকশা দিনে চলবে। এতে যানজট কমবে। তিনি দাবি করেন, শহরে চলাচল করে এমন তিন হাজারের বেশি অটোরিকশা এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যানের নিবন্ধন রয়েছে। তবে যেগুলোর নিবন্ধন নেই, সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিত জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। অচিরেই অবৈধ অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে মাইকিং করা হবে। যানজট এড়াতে নতুন করে আর নিবন্ধন দেওয়া হবে না।