ঈদের ছুটি উপলক্ষে শ্রীমঙ্গলের সব রিসোর্টের বুকিং প্রায় শেষ

ঈদের ছুটিতে শ্রীমঙ্গলের রিসোর্টগুলো প্রায় শতভাগ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। লেমন গার্ডেন রিসোর্টের ছবিপ্রথম আলো

পবিত্র ঈদুল আজহায় এবার লম্বা ছুটি পেয়েছেন মানুষ। ৫ থেকে ১৪ জুন টানা ১০ দিন ছুটি কাটাবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। স্কুল–কলেজে সেই ছুটি আরও বেশি, ১৯ জুন পর্যন্ত। দীর্ঘ এই ছুটি উপভোগ করতে দেশের পর্যটনস্থলগুলোতে ছুটে যাবেন অনেকে। ভ্রমণপিপাসুদের বরণে প্রস্তুত দেশের প্রসিদ্ধ পর্যটনস্থল চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গল।

পর্যটকদের জন্য শ্রীমঙ্গলে আছে প্রায় ১০০টি হোটেল–রিসোর্ট। এসব রিসোর্টের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইতিমধ্যে ৭ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত হোটেল-রিসোর্টগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। ঈদের দিন থেকে সব হোটেল–রিসোর্ট হাউসফুল পর্যটক থাকবে বলে আশা করছেন পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরখানেক ধরে ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় দেশের পর্যটন–সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। শ্রীমঙ্গলে এমনিতেই পর্যটকেরা সারা বছর ভিড় করেন।

শ্রীমঙ্গলে চারদিকে সবুজের সমারোহে সজ্জিত সারি সারি চা-বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের। পাশাপাশি দার্জিলিং টিলা, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই), টি মিউজিয়াম, বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, হাইল হাওর, মৎস্য অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল, নীলকণ্ঠ সাত রঙের চা কেবিন, চা-কন্যা ভাস্কর্য, বধ্যভূমি-৭১, লাল পাহাড়, শঙ্কর টিলা, গরম টিলা, ভাড়াউড়া লেক, ব্রিটিশদের সমাধিস্থল ডিনস্টন ওয়ার সিমেট্রি, হরিণছড়া গলফ মাঠ, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীদের পল্লিগুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। পাশাপাশি শ্রীমঙ্গলের পার্শ্ববর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, নুরজাহান চা–বাগান পর্যটকদের বিমোহিত করে।

শ্রীমঙ্গলের পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে বেশি রিসোর্ট রয়েছে রাধানগর ও ডলুবাড়ি এলাকায়। সেখানের লেমন গার্ডেন রিসোর্টের মালিক সেলিম মিয়া বলেন, ‘রাধানগর ও ডলুবাড়ি এলাকার সব রিসোর্টেই আগাম বুকিং পেয়েছি। আমাদের লেমন গার্ডেন রিসোর্টে ৮ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত প্রায় সব রুমই আগাম বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকদের কথা ভেবে আমরা সব ধরনের সুযোগ–সুবিধার ব্যবস্থা করেছি।’

শ্রীমঙ্গল ট্যুর অপারেটর অ্যান্ড ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আলম প্রথম আলোকে জানান, ঈদের এই লম্বা ছুটিতে বিদেশি পর্যটক নেই বললেই চলে। আর বিদেশি পর্যটক না এলে ট্যুর গাইডদের কম বুকিং থাকে। তবে হোটেল–রিসোর্টগুলো ভালো আগাম বুকিং পেয়েছে।

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলের রিসোর্টগুলো বেশির ভাগই শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। শহরে আর বড় কিছু রিসোর্টে এখনো কয়েকটি রুম আছে। সবাই আগাম বুকিং দিয়ে দিয়েছেন। ৭ থেকে ১৫ তারিখের জন্য পর্যটকেরা আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছেন। আমরা এরই মধ্যে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা আশা করছি, ঈদের লম্বা ছুটিতে চায়ের রাজ্যে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হবে।’

ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের পরিদর্শক মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী জানান, পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি বেশ লম্বা থাকায় প্রচুর পর্যটক সমাগম হবে। ইতিমধ্যে পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সভা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে নজরদারি রাখা হচ্ছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ থানার পুলিশ, র‍্যাব সাদাপোশাকে এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় থাকবে। পর্যটকেরা যেন নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করে সুন্দরভাবেই বাড়ি ফিরতে পারেন, সেভাবেই নিরাপত্তাব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে।