দাহ্য পদার্থ অবাধে বিক্রি

দোকানের সামনে ছোট টেবিল পেতে তার ওপরে বোতলে ভরে রাখা হয়েছে জ্বালানি তেল। সেখান থেকে গাড়িচালক বা পথচারী বোতল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

বেড়া-কাশীনাথপুর সড়কের পাশে দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে পেট্রল ও অকটেন। সম্প্রতি তোলা
ছবি: প্রথম আলো

পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার হাটবাজার ও সড়কের আশপাশে এমনকি মুদিদোকানেও বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার, অকটেন, পেট্রলসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ। অথচ অনুমোদন ছাড়া প্রকাশ্যে দাহ্য পদার্থ বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। স্থানীয় লোকজন বলছেন, হরতাল-অবরোধকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাস-ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় এসব দোকান বন্ধ না হওয়ায় সম্পদের ক্ষতির আশঙ্কা আরও বেড়েছে।

বিস্ফোরক পরিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, আইনানুযায়ী দাহ্য পদার্থ হওয়ায় লাইসেন্স ছাড়া কেউ পেট্রল বা অকটেন বিক্রি করতে পারবেন না। কিন্তু দুই হাজার লিটার পর্যন্ত ডিজেল বিক্রি করা যায়। অসাধু বিক্রেতারা অভিযানের মুখোমুখি হলেই পেট্রল, অকটেনের কথা আড়াল করে ডিজেল বিক্রির অজুহাত দেখায়।

আবার এলপিজি সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে ১০টি পর্যন্ত বিক্রির ক্ষেত্রে লাইসেন্স লাগে না। কিন্তু অসাধু বিক্রেতারা দোকানের সামনে ১০টির কম সিলিন্ডার রেখে ভেতরে প্রচুর সিলিন্ডার রাখেন। আসলে আইনের কিছুটা ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন কোনো কোনো বিক্রেতা। পেট্রল, অকটেন বা এলপিজি বিক্রির লাইসেন্স তাঁরা দিলেও এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের এনওসি (অনাপত্তি) লাগে। পাশাপাশি পূরণ করতে হয় নানা শর্ত।

জানতে চাইলে বেড়া ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন অফিসার আবদুল হালিম বলেন, সরকার পেট্রল পাম্প থেকেই যেখানে যানবাহন ছাড়া খোলা তেল বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে, সেখানে অবাধে মুদিদোকানসহ যত্রতত্র বোতলে করে খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত অবৈধ এই তেল বিক্রি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

দুই উপজেলার অংশজুড়ে অন্তত ৩০ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের বেড়া থেকে কাশীনাথপুর হয়ে নগরবাড়ী এবং কাশীনাথপুর থেকে কাজীরহাট পর্যন্ত অংশে মহাসড়কের দুই পাশে জ্বালানি তেলের শতাধিক অবৈধ দোকান রয়েছে। এ ছাড়া বেড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সাঁথিয়া হয়ে মাধপুর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কের পাশে রয়েছে পেট্রল-অকটেন বিক্রির শতাধিক খুচরা দোকান।

দুই উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর পাশে রয়েছে পেট্রল-অকটেন বিক্রির কয়েক শ দোকান। সড়ক-মহাসড়কের পাশের দোকানগুলোতে অবৈধভাবে বোতলে ভরে পেট্রল-অকটেন বিক্রি করা হচ্ছে। ছোট টেবিল পেতে তার ওপরে বোতলে ভরে রাখা হয়েছে জ্বালানি তেল। সেখান থেকে গাড়িচালক বা পথচারী বোতল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই উপজেলায় তেলের পাম্প রয়েছে ছয়টি। এ ছাড়া দুই উপজেলার পাশেই রয়েছে উত্তরাঞ্চলের প্রধান তেল সরবরাহ কেন্দ্র বাঘাবাড়ী নৌবন্দর। দুই উপজেলার তেল পাম্পসহ বাঘাবাড়ী তেল সরবরাহ কেন্দ্রের একটি অসাধু চক্রের কাছ থেকে তেল কিনে এনে বিক্রি করেন দোকানিরা। তবে সাঁথিয়ার কাশিনাথপুর মেসার্স রতন ফিলিং অ্যান্ড এলপিজি অটো গ্যাস স্টেশনের ব্যবস্থাপক নাদের মিয়া বলেন, ‘আমরা গাড়ি বা বাইক ছাড়া খোলা কোনো তেল বিক্রি করি না। থানা থেকে এ ব্যাপারে আমাদের নিষেধ করে দেওয়া আছে।’

দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন দোকানে এক কিংবা আধা লিটার ওজনের প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রল অথবা অকটেন ভরে পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ওই সব দোকানে নেই আগুন নির্বাপণের যন্ত্র। মূলত মোটরসাইকেলচালকেরা প্রতি লিটার ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দিয়ে এসব দোকান থেকে তেল কিনে থাকেন।

১০টি দোকানের মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের দাহ্য পদার্থ বিক্রির কোনো অনুমতি নেই। অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় তাঁরা রাস্তার পাশে বা অলিগলিতে এসব বিক্রি করছেন। পেট্রল পাম্প ও বাঘাবাড়ী থেকে এসব তাঁরা সংগ্রহ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন পেট্রল বিক্রেতা বলেন, মোটরসাইকেলের চালকদের চাহিদার কারণেই তাঁরা পেট্রল বিক্রি করেন। পেট্রল বিক্রি করতে যে লাইসেন্স লাগে, সে সম্পর্কে তাঁরা জানেন না। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কখনো এ ব্যাপারে তাঁদের কিছু বলা হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দুই উপজেলার বিভিন্ন বাজার, পাড়া-মহল্লা, মুদি, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক এমনকি ওষুধের দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার। এখানকার ছোট-বড় ২৫ থেকে ৩০টি বাজারে গ্যাস সিলিন্ডারের শতাধিক দোকান রয়েছে। ফুটপাতে কড়া রোদে ফেলে রাখা হয় এসব সিলিন্ডার।