ঈশ্বরগঞ্জে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ, বাধার মুখে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

১০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে নিজ কার্যালয়ে মাদ্রাসা অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন স্থানীয় লোকজন। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পানান ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায়ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পানান ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে এক চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকার বিনিময়ে ওই চাকরিপ্রার্থীকে সুবিধা না দেওয়ায় গ্রামের কিছু লোকের বাধার মুখে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেছে।

পরে বিক্ষুব্ধ লোকজন অধ্যক্ষকে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ওই মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।

পানান ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসাটি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের পানান গ্রামে অবস্থিত। আজ মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, নিজ কার্যালয়ে অধ্যক্ষ আবদুল মান্নানকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন গ্রামের কিছু লোকজন। অধ্যক্ষকে ‘ঘুষখোর’ আখ্যা দিয়ে স্লোগানও দেন তাঁরা। এ সময় মাদ্রাসা পরিচালনা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মতিউর রহমানসহ অন্য সদস্যরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া চেষ্টা করেন। আর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মাদ্রাসার বিভিন্ন কক্ষে অবস্থান করছিলেন।

মাদ্রাসাটির বারান্দায় কথা হয় ঈশ্বরগঞ্জ থানার উপপরির্দশক (এসআই) আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মুঠোফানে অধ্যক্ষের অনুরোধ পেয়ে তিনি মাদ্রাসায় এসেছেন। মাঠে অপেক্ষমাণ গ্রামের লোকজনের মুখে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে টাকা লেনদেনের অভিযোগের কথা শুনেছেন।

পানান গ্রামের বাসিন্দা ও ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, অধ্যক্ষ আবদুল মান্নান এর আগেও টাকার বিনিময়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এবারও একই কায়দায় কম্পিউটার কাম অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ঘুষ বাণিজ্যের কথা জানাজানি হয়ে পড়ায় গ্রামের মানুষ অধ্যক্ষের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের কার্যালয় ঘেরাও করেন স্থানীয় লোকজন। আজ শুক্রবার দুপুরে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পানান ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায়
ছবি: প্রথম আলো

চাকরিপ্রার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দা মাছুম বিল্লাহ অভিযোগ করেন, এক বছর আগে তাঁকে মাদ্রাসার কম্পিউটার কাম অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন অধ্যক্ষ আবদুল মান্নান। তিনি বাজারের একটি দোকানের ভিটি (স্থান) বিক্রি করে সেই টাকা জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু তাঁর দেওয়া টাকার চেয়ে বেশি টাকার বিনিময়ে অন্য একজনকে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অধ্যক্ষ। বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি গ্রামের মানুষের কাছে বিচার চান। পরে গ্রামবাসী অধ্যক্ষের ঘুষ কাণ্ডের প্রতিবাদ জানালে আজকের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, অধ্যক্ষ টাকা লেনদেন করেছেন কি না, তা তিনি জানেন না। তবে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীকে শান্ত করতে তিনি নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে কমিটির সদস্যরা সভায় করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. এরশাদুল হক দাবি করেন, তিনি অধ্যক্ষের কিশোরগঞ্জ শহরের বাসার গিয়ে নিজ হাতে ১০ লাখ টাকা তুলে দিয়ে এসেছেন। তাঁর সঙ্গে চাকরিপ্রার্থী মাছুম বিল্লাহ ও এলাকার ইউপি সদস্য আবদুস সালাম ছিলেন।
এ বিষয়ে আবদুস সালাম বলেন, টাকা হস্তান্তরের সময় তিনি অধ্যক্ষের বাসায় উপস্থিত ছিলেন।

একপর্যায়ে পুলিশ পাহারায় মাদ্রাসা ত্যাগ করার সময় এক চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মো. আবদুল মান্নান তা অস্বীকার করেন। তৃতীয় পক্ষ আপনার বাসায় গিয়ে টাকা দিয়ে এসেছেন, এমন প্রশ্ন করলে তিনি দ্রুত মাদ্রাসা ছেড়ে চলে যান।