‘শীতি মনডা বোলে না বাড়িততি বের হই’

চুয়াডাঙ্গায় টানা তিন দিনের মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শেষে দুই দিন বিরতির পর আজ বুধবার আবারও শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা।

পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার আজ সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ১২ জানুয়ারি শুক্রবার চলতি মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ রেকর্ড করে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার।

ওই দিন সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন শনিবার একই সময়ে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং তার পরদিন রোববার ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

আবহাওয়াবিদেরা জানান, কোনো এলাকায় তাপমাত্রা যদি ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, তাহলে ওই এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। টানা তিন দিন শৈত্যপ্রবাহের পর সোমবার তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, পরদিন মঙ্গলবার দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় এমন শীত অনুভূত হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ

এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসায় আন্তজেলা ও দূরপাল্লার যানবাহনগুলোকে আজ দিনেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। সাধারণত চুয়াডাঙ্গা শহরে সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও আজ ১০টা পর্যন্ত বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল।

চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকার সরদারপাড়ায় নর্দমাসংস্কারের কাজ করছিলেন দুই শ্রমিক। দুজনেরই বাড়ি দামুড়হুদা উপজেলার ঝাঁঝাডাঙ্গা গ্রামে। তীব্র শীতের মধ্যে কাদাপানিতে কাজ করতে করতে শ্রমিক আবদুল আলীম বলেন, ‘শীতি মনডা বোলে না বাড়িততি বের হই। সাতসকালে কুয়াশার মদ্দি আলমসাধু চইড়ে চুয়োড্যাঙ্গা আসতি হয়। ঠান্ডা বাসাতে জমে যায়। আবার কাদাপানির ভেতর কাজ কত্তি গিয়ে পা টালি যায়। প্যাটের জন্নি সপ কষ্টই সহ্য করতি হয়।’

উত্তর থেকে ধেয়ে আসা কনকনে ঠান্ডা বাতাসে ঠান্ডাজনিত রোগবালাই বেড়ে চলেছে। জেলার সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোটাভাইরাস ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, অ্যাজমাসহ শ্বাসকষ্টের রোগ নিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী ভর্তি হচ্ছেন, চিকিৎসা নিচ্ছেন। সদর হাসপাতালে ১৩ শয্যার বিপরীতে আজ সকালে ৭৬ শিশুকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাওয়া যায়। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে আরও ৫৮ শিশু ভর্তি আছে।

সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের পরামর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, শীত মৌসুমে মায়েদের সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। ছয় মাস পর্যন্ত শিশুদের কেবল বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনীয় সব টিকা দিতে হবে। হাতে-পায়ে মোজা ও গরম পোশাক পরাতে হবে। ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। মায়েদের যাতে ঠান্ডা না লাগে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।