সরাইলে সাড়ে ৪ ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ, বল্লমের আঘাতে এক বৃদ্ধ নিহত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে সোয়া শতাংশ সরকারি জায়গার দখল নিয়ে পূর্ববিরোধের জেরে গ্রামের বাসিন্দাদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আরফজ আলী (৬০) নামের এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন।
গতকাল রোববার বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের শিপন মিয়া (৫৫) ও দানা মিয়ার (৪৫) লোকজনের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আরফজ আলী পুরোনো কাপড়ের ব্যবসা করতেন। তিনি দানা মিয়ার পক্ষের।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেওড়া গ্রামের সোয়া শতাংশ সরকারি জায়গা দীর্ঘদিন ধরে দানা মিয়া দখলে রেখেছিলেন। তিন-চার বছর আগে ওই জায়গা দখলে নেন শিপন মিয়া। এ ঘটনায় উভয়ের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। এ নিয়ে গ্রামে একাধিকবার সালিস হয়েছে। সমাধান হয়নি। পরে গ্রামের লোকজন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এ নিয়ে ১৫ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই দিন দুই পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হন।
১৫ নভেম্বরের ঘটনার জেরে গতকাল বেলা ২টার দিকে উভয় পক্ষের লোকজন দা, বল্লম, ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আবার সংঘর্ষে জড়ান। বেলা ৩টার দিকে গ্রামের বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য আপন মিয়া শতাধিক লোক নিয়ে শিপন মিয়ার পক্ষে সংঘর্ষে জড়ান। তাঁরা প্রতিপক্ষের লোকজনের বসতবাড়িতে হামলা চালান। হামলাকারীরা বিশেষ পোশাক পরা ছিলেন। তাঁদের মাথায় ছিল হেলমেট। তাঁরা প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় দানা মিয়ার পক্ষের লোকজন পিছু হটতে বাধ্য হন।
হামলার মুখে দানা মিয়ার লোকজন পালিয়ে গেলেও বাধা দেন আরফজ আলী, ফারুক মিয়াসহ কয়েকজন। এ সময় আরফজ আলী ও ফারুক মিয়াকে প্রতিপক্ষের লোকজন বল্লম দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। পরে লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আরফজ আলীকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা সালোয়াত পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত আটটার দিকে ওই বৃদ্ধকে আমাদের এখানে আনা হয়েছিল। তবে এখানে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ওই বৃদ্ধের বুকে, পেটে ও পিঠে চারটি গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল। এতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’
গুরুতর আহত ফারুক মিয়াকে (৫৫) ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত অন্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
গ্রামের বাসিন্দাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিপন মিয়া ও দানা মিয়ার বিরোধের বিষয়টি মীমাংসার জন্য গ্রামবাসী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু আপন মেম্বারের জন্য উভয় পক্ষের বিরোধটি শেষ করা সম্ভব হয়নি। গতকাল ১০-১৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গরু-বাছুরসহ মালামাল লুটপাট করা হয়েছে। ১০-১৫টি পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। গতকাল সন্ধ্যার পর গ্রামটি নারী-পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদুল আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। অভিযান অব্যাহত আছে। ঘটনার পরপর আপন মিয়া, শিপন মিয়াসহ তাঁদের লোকজন পালিয়েছেন। লাশ পুলিশের জিম্মায় জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আজ ময়নাতদন্ত করা হবে।