গাজীপুরে দুই মহাসড়কেই দীর্ঘ যানজট, ঈদে ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগ

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকা। আজ মঙ্গলবার বিকেলেছবি: মাসুদ রানা

ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকা মঙ্গলবার সকালে কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও দুপুরের পর থেকে পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ সময় সড়কে আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ঘরমুখী মানুষ।

সকাল থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করে। দুপুরের পর কারখানা ছুটি হলে বিকেলে মহাসড়ক দুটিতে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, একযোগে বিপুলসংখ্যক যানবাহন মহাসড়কে বের হওয়ায় অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি হয়েছে। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পুলিশ যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়েকর গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ঘরমুখো মানুষের ভিড়। মঙ্গলবার সকাল ১০ টায়
ছবি: প্রথম আলো

হাইওয়ে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহনের ধীরগতি থাকলেও বেলা সাড়ে তিনটায় যানজট শুরু হয়। পাশাপাশি অতিরিক্ত যাত্রীর তুলনায় পরিবহনের সংকট দেখা গেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী থেকে চন্দ্রা–পল্লী বিদ্যুৎ পর্যন্ত তীব্র যানজট রয়েছে। চন্দ্রা–আশুলিয়া রোডেরও একই অবস্থা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী, বোর্ডবাজার হয়ে চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে সালনা পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর এলাকার একটি ওষুধ তৈরি কারখানায় চাকরি করেন সিরাগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার নলসন্ধ্যা গ্রামের আনোয়ার হোসেন। সড়কে যানজটের কথা চিন্তা করে মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে চন্দ্রা ত্রিমোড় থেকে বাসে রওনা দেন।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যানজটের কথা চিন্তা করে সকালে রওনা হয়েছি। কোথাও যানজট পাইনি। সকাল আটটায় বাসে উঠে এক ঘণ্টার মধ্যে সকাল নয়টায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা এলাকায় পৌঁছাই। এরপরই থেমে যায় বাসটি।’ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে জানান, এলেঙ্গা পার হওয়ার পরই শুরু হয় যানজট। এলেঙ্গা থেকে সোয়া এক ঘণ্টায় যমুনা সেতুর পূর্ব পাশের টোল প্লাজায় পৌঁছান। ওই এলাকায় যানবাহনের ধীরগতিতে তাঁর মতো শত শত ঘরমুখী মানুষ দুর্ভোগে আছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় শত শত যানবাহন দাঁড়িয়ে আছে। ঘরমুখী মানুষ তবু সেসব বাসে উঠতে পারছেন না। কেউ উঠতে চাইলেও তাঁদের কাছে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। মহাসড়কে সকাল থেকে যানবাহনের চাপ থাকলেও যানজট ছিল না। কিন্তু বিকেলে যানজট শুরু হয়। চন্দ্রা ত্রিমোড় থেকে গাজীপুরের দিকে প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং চন্দ্রা ত্রিমোড় থেকে নবীনগর সড়কে ৭ কিলোমিটার যানজট দেখা গেছে। চন্দ্রা ত্রিমোড় থেকে টাঙ্গাইলের দিকে গোড়াই পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট রয়েছে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশে ৩০০ টাকায় যাত্রী তুলছিলেন ট্রাকচালক সোলায়মান মিয়া। সোলায়মান বলেন, সোমবার রাতে ঢাকার কমলাপুর এলাকায় গরু নিয়ে ঢুকেছিলেন। মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা থেকে বের হয়ে টঙ্গী এলাকায় অপেক্ষা করেন। পরে সেখান থেকে দুপুরে গিয়ে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় অবস্থান নেন। এখানকার সড়কে গাড়ি না পেয়ে অনেককেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন।

ট্রাকে করে ময়মনসিংহে যাচ্ছিলেন মো. আজিজুল। আজিজুল বলেন, ‘দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে বাসে উঠতে পারিনি। ঢাকা থেকে যে বাসগুলো ময়মনসিংহ যাচ্ছে, তা যাত্রীতে পরিপূর্ণ, ভাড়া নিচ্ছে কয়েক গুণ বেশি। ট্রাকে ৩০০ টাকায় ময়মনসিংহের বাইপাস পর্যন্ত যাচ্ছি। বাসের চাইতে কম ভাড়ায় যেতে পারব।’

আরও পড়ুন

২১ জন যাত্রী নিয়ে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে শেরপুর যাওয়ার উদ্দেশে জনপ্রতি ৩৫০ টাকা ভাড়ায় পিকআপে রওনা হয়েছেন আসাদুল ইসলাম। তিনি জানান, তাঁরা সবাই গাজীপুর নগরীতে পাশাপাশি কারখানায় কাজ করেন। বাড়ি শেরপুরের কর্ণজোড়া এলাকায়। বাসে অতিরিক্ত ভাড়া, বাস পেতে ভোগান্তিসহ নানা কারণে পিকআপ ভাড়া করে একসঙ্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে ঝুঁকির সঙ্গে আনন্দও আছে। বৃষ্টি ঠেকাতে বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি ছাউনি প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে নুরুল ইসলাম জানান।

গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) নাজমুস সাকিব বলেন, ঈদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছে পুলিশ। পুলিশের ৬০০ সদস্য ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁরা দুই পালায় দায়িত্ব পালন করছেন। রাস্তায় প্রচুর যাত্রী থাকলেও এখনো যানজটের হয়রানি ছাড়াই তাঁরা বাড়ি যাচ্ছেন। তবে দুপুরের পর থেকে মহাসড়কে যানবাহন বৃদ্ধি পেয়ে তা পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

আরও পড়ুন