গঙ্গাচড়ায় এসআইসহ পুলিশের চার সদস্যকে মারধরের অভিযোগ, আটক ৩

রংপুর জেলার মানচিত্র

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় জমি–সংক্রান্ত একটি অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে এক কর্মকর্তাসহ চার পুলিশ সদস্য মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপজেলার বড়বিল ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষিণ পানাপুকুর চৌধুরীহাট দোলাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত উপপরিদর্শক (এসআই) রেজায়ে রাব্বী মণ্ডলকে (২৮) রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রীতি সাহা জানান, আহত রেজায়ে রাব্বীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আহত পুলিশ সদস্য মিথুন রায়, ওয়েদুর রহমান ও শরিফুল ইসলামকে হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর নগরের সিও বাজার এলাকার মহুবার রহমান নামের এক ব্যক্তি গঙ্গাচড়া উপজেলার ওই গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ৭৫ শতক জমি ক্রয়ের উদ্দেশ্যে বায়নাপত্র দলিল করেন। দলিলে উল্লেখ করা হয়, ছয় মাসের মধ্যে জমির সম্পূর্ণ টাকা দিয়ে আশরাফুলের কাছ থেকে মহুবার রহমান কবলা দলিল করে নেবেন। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও আশরাফুলকে তিনি টাকা দিতে ব্যর্থ হন। এতে আশরাফুল শুক্রবার ওই জমিতে গাছ লাগাতে গেলে মহুবার এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পরে আশরাফুলও থানায় অভযোগ দেন।

ওই দুই অভিযোগের ভিত্তিতে থানার এসআই রেজায়ে রাব্বী একদল পুলিশ নিয়ে সন্ধ্যার আগে ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ আশরাফুলকে টেনেহেঁচড়ে পিকআপ ভ্যানে তোলার চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে বাধা দেন। এতে এক পুলিশ সদস্য স্থানীয় এক নারীকে গুলি করার হুমকি দেন। এ সময় ক্ষুব্ধ লোকজন পুলিশ সদস্যদের আটকে মারধর করেন।

খবর পেয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানা থেকে আরেক দল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে। এ সময় গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।

পানাপুকুর গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী নারী রশিদা বেগমসহ অন্তত ১০ জন অভিযোগ করেন, পুলিশ এসে মহুবারের পক্ষ নিয়ে নিরপরাধ আশরাফুলকে ধরে টেনেহেঁচড়ে গাড়িতে তুললে তাঁরা বাধা দেন। পুলিশ তখন উপস্থিত লোকজনকে মারপিট করতে থাকেন। গ্রামের লোকজনও ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশকে আটক করেন। এ সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং পুলিশের একটি ওয়ারলেস সেট সেখানে পেয়ে লোকজন স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেন।

রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান। এ সময় এলাকার তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। আটক ব্যক্তিরা হলেন জাকির হোসেন (৩৭), ময়না বেগম (৪০) ও মিরকুলাল (৪৫)। ঘটনার পর পুলিশি আতঙ্কে এলাকার অনেকে বাড়ি ছেড়েছেন।

এ বিষয়ে শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান মুঠোফোনে জানান, ওই ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ কোনো গুলি ছোড়েনি।