বান্দরবানে তিন সিদ্ধান্তে শেষ হলো কেএনএফের সঙ্গে সশরীর বৈঠক
বান্দরবানে অবশেষে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সশরীর প্রথম বৈঠক আজ রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে আগামী ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে উভয় পক্ষ আবার বসা, বৈঠকের আগপর্যন্ত শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা ও কেএনএফের তৎপরতায় অন্যত্র আশ্রয় নেওয়া বম পরিবারগুলো ফিরে এলে পুনর্বাসন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের জন্য একটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে বলে বৈঠক শেষে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির নেতারা জানিয়েছেন।
বেলা ১১টায় রুমা উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে মুনলাইপাড়ায় উভয় পক্ষ মুখোমুখি বৈঠকে বসে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে বৈঠক। বৈঠকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষে ১১ সদস্যের দলের নেতৃত্বে ছিলেন কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সাধারণ সম্পাদক লালজার লম বম, মুখপাত্র কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা, আইনজীবী বাসিংথুয়াই মারমা, সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম, সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহ আলম। অপর দিকে কেএনএফের পক্ষে পাঁচ সদস্যের দলের সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি লাল এং লিয়ান বম নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যরা হলেন কেএনএফের উপদেষ্টা চেওসিম বম, দুর্নীবারপাড়ার কার্বারি রুয়াল্লিন বম, সুংসংপাড়ার অলীভ বম ও ফারুকপাড়ার লিয়ানমিন বম।
সশস্ত্র কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য গত মে মাসে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। এ পর্যন্ত কয়েক দফা কেএনএফ নেতাদের সঙ্গে অনলাইন বৈঠকের পর এবার প্রথম সশরীর বৈঠকের আয়োজন করা হলো।
শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা প্রথম আলোকে বলেন, উভয় পক্ষের বৈঠক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে। বৈঠকে কেএনএফ নেতারা তাঁদের দাবিদাওয়া সম্পর্কে সরকারের অবস্থান জানতে চেয়েছেন। শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির নেতারা তাঁদের বলেছেন, দাবিদাওয়া নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠকে আলোচনা হবে। এবারের প্রথম বৈঠকে শুধু শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আগামী (ডিসেম্বর) মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে, অর্থাৎ খ্রিষ্টানদের বড়দিনের আগে আবার উভয় পক্ষ বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তী বৈঠক সম্পর্কে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা শেষে একটি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়। পরবর্তী বৈঠকে কেএনএফের কারা কারা থাকবেন, সংগঠনটির প্রধান নাথান বম থাকবেন কি না জানা যায়নি। আলাপ-আলোচনা করে কারা থাকবেন, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বৈঠক শেষে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ক্যশৈহ্লা মারমা সাংবাদিকদের কাছে সংক্ষিপ্তভাবে জানিয়েছেন, কেএনএফ নেতারা শান্তি ফিরিয়ে এনে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ব্যাপারে আন্তরিক। তাঁদের দাবিদাওয়ার ব্যাপারে পরবর্তী আলোচনা হতে পারে।
পাহাড়ে নতুন সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গমে ও রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নে তৎপরতা শুরু করে। তাদের দাবি, তারা বম, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি, খেয়াং ও ম্রোদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে। তাদের বিরুদ্ধে গোপন আস্তানায় সমতলের জঙ্গিগোষ্ঠী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের অভিযোগ ওঠে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছরের অক্টোবর থেকে কেএনএফ ও শারক্বীয়া জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। অভিযানে পাহাড় থেকে ৩৮ জন জঙ্গি ও কয়েকজন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে কেএনএফের হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন।