উন্মুক্ত স্থানে ময়লার ভাগাড়

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর শহরের উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর শহরের তিনটি উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যস্ত সড়কের তিনটি স্থানে প্রতিনিয়ত আবর্জনা ফেলায় দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে।

স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ, এর প্রতিকার চেয়েও মিলছে না। সমস্যাটি আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। শেষে প্রতিকার পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও মেয়রের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করা হয়।

কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কটিয়াদী দ্বিতীয় শ্রেণির পৌরসভা। পৌর শহরে নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে। শহরে পরিচ্ছন্নতা চোখে পড়ে না। এ অবস্থায় বাড়তি দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে যত্রতত্র আবর্জনার ভাগাড়।

উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন (৫০)। নানা প্রয়োজনে তাঁকে প্রতিনিয়ত শহরে আসা-যাওয়া করতে হয়। জসিম বলেন, ডানে গেলে দুর্গন্ধ। বাঁয়ে গেলেও দুর্গন্ধ। দুর্গন্ধ নাকে ধাক্কা দেয়। তখন মন খারাপ হয়ে যায়। পরে নাক চেপে দ্রুত স্থান ত্যাগ করার চেষ্টা করি। এই অবস্থায় শহরে স্বাভাবিক যাতায়াত করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়।

সম্প্রতি ঘুরে দেখা যায়, পৌর শহরের মূল সড়কের অন্তত ৯টি স্থানে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এর মধ্যে তিনটি স্থানে আবর্জনার স্তূপ দিন দিন বড় হচ্ছে। তিনটি স্থানের মধ্যে ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভাগাড় আছে একটি। অপর দুটি হলো পাটপট্টি ও পুরোনো বাজার। তিনটি ভাগাড়ে আবর্জনার স্তূপটি থেকে বের হওয়া দুর্গন্ধ চারপাশের অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে লাগোয়া ব্যবসায়ী ও আবাসিক এলাকার মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা দায় হয়ে পড়েছে।

পৌর শহরের একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঝুমা বেগম ও সাথী আক্তার। তারা বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা। বিদ্যালয় খোলা থাকলে দিনে দুইবার তাদের বাসস্ট্যান্ড এলাকার সড়ক হয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়।

ঝুমা ও সাথী জানায়, দুর্গন্ধে পেট ভরে যায়। তখন আর কিছু ভালো লাগে না। অন্য সড়ক দিয়ে যেতে চাইলেও পরিস্থিতি একই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যা ৩০। মূলত খোলা জায়গায় আবর্জনা ফেলছেন ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরাও আবর্জনা ফেলে আসছেন। প্রতিটি ভাগাড় থেকে কেবল দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে না, একই সঙ্গে মশা-মাছি উৎপাদনের নিরাপদ আবাসস্থল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বৃষ্টি হলে সমস্যাটি বড় হয়। তখন আবর্জনা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। অর্থ নেই—এমন অজুহাত দাঁড় করিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ দায়মুক্তি নিয়ে থাকে। এই অবস্থায় শহরকে আবর্জনামুক্ত করার আর কোনো কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান নেই।

কটিয়াদীর ইউএনওর দায়িত্বে রয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) তামারা তাসবিহা। গত মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করে তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি কিছু করার থাকে, অবশ্যই তিনি করার চেষ্টা করবেন।

পুরো বিষয় নিয়ে কথা হয়, পৌর মেয়র শওকত উসমানের সঙ্গে। তিনি টানা দুইবারের মেয়র। আবর্জনার ভাগাড় প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি অসহায় আত্মসমর্পণ করেন। তিনি বলেন, আয় নেই, তহবিল শূন্য। সরকারি বরাদ্দও নেই। ডাম্পিংয়ের জন্য জায়গা কিনতে অনেক টাকার প্রয়োজন। মূলত আবর্জনা সরানোর স্থায়ী জায়গা না থাকায় সমস্যাটি বড় হচ্ছে।

শওকত উসমান মানুষের সচেতনতার মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, অনেকে আবর্জনা পলিথিনে ভরে মাঝ সড়কে ফেলে যান। একবারের জন্য ভাবনায় আসে না, এটি সাধারণ মানুষের জন্য কত বড় সমস্যা। তবে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে টাকার জোগান হলেই তিনি ভাগাড় থেকে আবর্জনা সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়ে থাকেন।