হঠাৎ বন্ধ কালভার্ট, নালার পানি ঘরে 

সড়কের ময়লা পানি পারাপারের জন্য ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা ভ্যান ব্যবহার করছেন বাসিন্দা ও শ্রমিকেরা। গাড়িতে চড়তে গুনতে হচ্ছে ভাড়া।

গাজীপুর জেলার মানচিত্র

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কয়েকটি এলাকার শিল্পকারখানা ও বাড়িঘরের পানি সরানো হয়, এমন একটি কালভার্ট কয়েক দিন আগে হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে রাস্তাটা তো বটেই বাড়িঘরেও ঢুকছে নালার ময়লা পানি। এতে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকায় বসবাস করা কয়েক হাজার শ্রমিক।

পৌর এলাকার লিচুবাগান, গিলারচালা, মার্কেটপাড়া, চেরাগআলী পাড়া, দুখলা এলাকাগুলোতে গত বুধবার বিকেল থেকে এমন ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। বুধবার রাত থেকে পানি ক্রমে বাড়ছে। চার শতাধিক ঘরবাড়ির উঠান, বারান্দাসহ বিভিন্ন জায়গায় ময়লা পানি প্রবেশ করেছে। ইকো কটন মিলস লিমিটেড নামের একটি কারখানা দুখলা ও গিলারচালা লাগোয়া এলাকায় একটি নালার কালভার্ট বন্ধ করে দেওয়ায় এমন দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বের হওয়া গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি-লিচুবাগান সড়ক ধরে আধা কিলোমিটার পশ্চিম দিকে গেলেই জলবদ্ধতার চিত্র চোখে পড়ে। পানির নিচে তলিয়ে থাকা সড়ক দিয়ে হেঁটে চলাচলের উপায় নেই বললেই চলে। সড়কের ময়লা পানি পারাপারের জন্য ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা ভ্যানগাড়ি ব্যবহার করছেন বাসিন্দারা। ১০ থেকে ২০ টাকার বিনিময়ে এসব যানবাহন লোকজনকে পার করে দিচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই সড়কের সঙ্গে যুক্ত আরও চারটি স্থানীয় সড়ক পানিতে তলিয়ে আছে। সড়কের আশপাশের শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। দুই পাশের কয়েক শ বাড়ির আঙিনায়, এমনকি ঘরের মেঝেতেও পানি প্রবেশ করেছে। এসব বাড়িতে স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন কারখানার ছয় থেকে সাত হাজার শ্রমিকের বসবাস। ওই এলাকার পিলোসিট সুয়েটার লিমিটেড, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, ইউর ফ্যাশন, ওয়ান টেক্সসহ সাতটি কারখানার শ্রমিক জলাবদ্ধতা মাড়িয়ে কর্মস্থলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় লোকজন আরও বড় বিপদের আশঙ্কা করছেন।

জসরেজমিনে দেখা যায়, লিচুবাগান এলাকা থেকে দক্ষিণ দিকে ৩০০ মিটার দূরের একটি স্থানে বড় নালায় স্থাপন করা কালভার্টের এক পাশে মাটি ফেলে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ইকো কটন মিলস লিমিটেড গত বুধবার দুপুরে সেখানে মাটি ফেলে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেয় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। মাটি ফেলার পরপরই বিশাল এলাকার পানিপ্রবাহ একদম বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও স্থানীয় বাড়িঘরের পানি ওই কালভার্ট হয়ে পাশের লবলং খালে গিয়ে পড়ত।

ইকো কটন মিলসের বন্ধ করা বাঁধের ছবি তুলতে গেলে সেখানে নিয়োজিত এক নিরাপত্তাকর্মী এই প্রতিবেদককে বাধা দেন। এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমার কিছুই বলার নেই। আমাদের ঢাকা অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন।’ তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কারও মুঠোফোন নম্বর দিতে রাজি হননি এই কর্মকর্তা।

স্থানীয় বাসিন্দা ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইকো কটন বাঁধ দেওয়ার কারণে ফুঁসে ওঠা পানি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে দুটি পোশাক কারখানা তাঁদের দিকে যাওয়া পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এতে তাঁদের নিজেদের ভোগান্তি কমলেও বেড়েছে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ।

লিচুবাগান এলাকার বাসিন্দা ইসহাক মিয়া এই প্রতিবেদককে তাঁর বাড়িতে ছড়িয়ে পড়া পানির দৃশ্য দেখাতে নিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘এত কষ্টে আছি আমরা অথচ কেউ কিছু বলছে না। বাড়ির ১৫টি কক্ষের মেঝেতে পানি প্রবেশ করেছে।’ গিলারচালা এলাকার বাসিন্দা ও পোশাক কারখানার শ্রমিক সুমন ইসলাম বলেন, অন্তত পাঁচ হাজার শ্রমিক প্রতিদিন এই চারটি আঞ্চলিক সড়কের জলাবদ্ধতা দিয়ে চলাচল করেন। বিকল্প কোনো পথ নেই। এই ভোগান্তি কবে দূর হবে, তাঁরা জানেন না।

ইউর ফ্যাশন লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ইকো কটন মিল কর্তৃপক্ষ কালভার্টের মুখ বন্ধ করায় এই ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিক ও এলাকার সাধারণ মানুষসহ সবাই চরম ভোগান্তিতে আছেন।

বিষয়টি জানালে কোনো অভিযোগ পাননি উল্লেখ করে শ্রীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রমিজ উদ্দীন বলেন, ‘কালভার্টটি বন্ধ করে দেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জেনেছি। তবে স্থানীয় কোনো বাসিন্দাদের কেউ আমার কাছে আসেননি। যাঁদের সমস্যা, তাঁরা আমার কাছে না এলে আমার কী করার আছে।’

এ বিষয়ে শ্রীপুর পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টির খোঁজ নেবেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানতে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলামের দাপ্তরিক মুঠোফোনে কল দিলে তিনি সংযোগ কেটে দেন। ফলে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।