সিলেট নগরের সড়কের পাশের উন্মুক্ত নর্দমা যেন ‘মরণফাঁদ’

৪২টি ওয়ার্ডে নর্দমা আছে ১ হাজার ৫৭০ কিলোমিটার। বর্তমানে মোট ১ হাজার ১২০ কিলোমিটার নর্দমা উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে।

সিলেট নগরের অনেক স্থানে নালা-নর্দমার ঢাকনা (স্ল্যাব) নেই। উন্মুক্ত এসব নর্দমার কারণে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। মশার উৎপাত বাড়ছে। নগরের কালীবাড়ি এলাকায় গতকাল বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

সিলেট নগরের কালীবাড়ি এলাকার মূল সড়কের পাশ ঘেঁষে থাকা নর্দমার বিভিন্ন স্থান উন্মুক্ত পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন বলেন, সন্ধ্যার পর এ সড়ক দিয়ে সাবধানে হাঁটতে হয়। অন্ধকারে একটু অসাবধান হলেই নর্দমায় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রায়ই মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

শুধু কালীবাড়ি নয়, হাওলাদারপাড়া, আখালিয়া নতুনবাজার, ব্রাহ্মণশাসন, পনিটুলা, করেরপাড়া, বাগবাড়ী, জামতলা ও উপশহর এলাকার মূল সড়কের পাশে থাকা নর্দমার বিভিন্ন অংশ স্ল্যাববিহীন অবস্থায় রয়েছে। এতে পথচারীদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ নিয়ে পথ চলতে হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নগরে এ চিত্র দেখা গেছে।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা যায়, সিলেট সিটি করপোরেশনে এখন ৪২টি ওয়ার্ড আছে। এর আগে নগরে ২৭টি ওয়ার্ড ছিল। পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডে ৯৭০ কিলোমিটার নালা-নর্দমা আছে। এর মধ্যে স্ল্যাব রয়েছে ৪৫০ কিলোমিটার অংশে। বাকি ৫২০ কিলোমিটার উন্মুক্ত। এ ছাড়া নতুনভাবে বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডে ৬০০ কিলোমিটার নালা-নর্দমা আছে। এর কোনো অংশেই স্ল্যাব নেই। সব মিলিয়ে বর্তমানে সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ১ হাজার ১২০ কিলোমিটার নালা-নর্দমা উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে।

স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, নালা-নর্দমায় ঢাকনা না থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়েই চলছে। পর্যাপ্ত সড়কবাতি না থাকায় রাতের অন্ধকারে কিংবা জলাবদ্ধতার সময় নর্দমার খোলা অংশটা বুঝতে পারা যায় না। এতে অনেকেই নর্দমায় পড়ে আহত হন। অথচ সেদিকে কর্তৃপক্ষের নজর নেই। পাড়া-মহল্লার শিশুরা খেলাধুলা করতে গিয়ে প্রায়ই পড়ে গিয়ে ব্যথা পায়। পাশাপাশি বাড়ছে মশার উপদ্রব।

হাওলদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মানবেন্দ্র মজুমদার বলেন, স্ল্যাব না থাকায় মশার উপদ্রব সারা বছর লেগেই থাকে। দুর্ঘটনার আশঙ্কা তো রয়েছেই।

উপশহর এলাকার বাসিন্দা খলিল উদ্দিন (৪৭)। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। খলিল বলেন, উপশহর এলাকাটি নগরে অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত। অথচ এই এলাকার বিভিন্ন ব্লকের সড়কের পাশের নর্দমা উন্মুক্ত অবস্থায় আছে। এলাকায় পর্যাপ্ত সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর হাঁটতে গিয়ে অনেকে বেখেয়ালে নর্দমায় পড়ে গিয়ে আহত হন।

কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ধনঞ্জয় দাশ বলেন, কালীবাড়ি থেকে হাওলাদারপাড়ামুখী যে সড়কটি গেছে, এর বাম দিকের অংশে গভীর নর্দমা আছে। নর্দমার স্থানে স্থানে উন্মুক্ত থাকায় সব সময় আতঙ্ক নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা চলাচল করেন।

পনিটুলা এলাকার বাসিন্দা পলাশ তালুকদার বলেন, পনিটুলা, করেরপাড়া ও কালীবাড়ি এলাকার বিভিন্ন মহল্লার নালা-নর্দমায় স্লাব না থাকায় এসব এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি। এ ছাড়া এসব উন্মুক্ত নালা-নর্দমায় স্থানীয় লোকজনের অনেকে আবর্জনা ও খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলায় দুর্গন্ধ ছড়ায়। এতে এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে উন্মুক্ত নালা-নর্দমায় স্লাব নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। তবে নতুনভাবে সিটি করপোরেশনের সীমানায় যুক্ত হওয়া ১৫টি ওয়ার্ডে এখনো নর্দমা পাকাকরণ ও স্ল্যাব বসানোর জন্য কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। বর্ধিত এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেটা বাস্তবায়িত হলে নালা-নর্দমায় স্ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হবে।