ওই বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংগ্রহশালায় শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে ছবিটি দেওয়া হয়। ছবিটির জন্য ২০১৯ সালে ‘কপিরাইট’ (মেধাস্বত্ব) সনদ নেন শিল্পী হাবিবুল্লাহ। ২০২০ সালে তিনি ‘মেধাসম্পদ সুরক্ষা সম্মাননা’ সনদও পেয়েছেন। তাঁর দাবি, বঙ্গবন্ধুর ছবির জন্য দেশে একমাত্র কপিরাইটধারী ব্যক্তি তিনি।

শিল্পী হাবিবুল্লাহ আল ইমরান বলেন, ফটোগ্রাফির জন্য এ এযাবৎকালের যেসব ডিএসএলআর ক্যামেরা আবিষ্কৃত হয়েছে, তা মাত্র ৫০ দশমিক ৬ মেগাপিক্সেলের (২০১৯)। আর বঙ্গবন্ধুর ডিজিটাল পেইন্টিংটি তৈরি করা হয়েছে ৫৩৩ মেগাপিক্সেলে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এমন মানের ক্যামেরা হয়তো আগামী ১০-১৫ বছর পর তৈরি হতে পারে।

শিল্পীর পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধুর ছবির যে পরিবর্তন এসেছে তা হলো, ডান গালের তিল, দুই চোখ আর স্যুটের কাপড়ে। বঙ্গবন্ধু বরাবরই হাতছাড়া কালো কোট পরতেন, যা ‘মুজিব কোট’ নামেই পরিচিত। তবে অফিশিয়াল অনুষ্ঠানে গাঢ় নীলচে আর ফ্যাকাশে চেকের স্যুটে তাঁকে দেখা গেছে, যার কিছু নমুনা বিদেশি সাংবাদিকের ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্য থেকে পেয়েছেন শিল্পী।

হাবিবুল্লাহর মতে, সংরক্ষণ ও প্রযুক্তির বিবর্তনের কারণে মূল ছবির অনেক নমুনা হারিয়ে গেছে। ডান গালে ছোট তিলের অবস্থান সেই ছোট নেগেটিভে ফিল্ম-স্পট হিসেবে মনে করে অনেকেই মুছে ফেলেছেন, যাঁরা বঙ্গবন্ধুকে নিজের চোখে দেখেননি। এমনিভাবে চোখ দুটির কনট্রাস্ট ধরে রাখতে গিয়ে এজ-রিঙ্কেল বা বয়সের ভাঁজগুলো মুছে ফেলেছেন অনেকে।

শিল্পী হাবিবুল্লাহর ভাষ্য, ৫০ থেকে ৬০ বছর আগের সেই ছোট্ট ফিল্ম নেগেটিভের যে পিক্সেল ডেপ্থ ছিল, তা থেকে আকার বেশি বড় করার সুযোগ নেই। তাই আগামীর কথা ভেবে ডিজিটাল পেইন্টিংটি প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ গুণ বড় করে বানানো হয়েছে। ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। ডিজিটাল পেইন্টিংয়ের অধিকাংশ তথ্য ও নমুনা ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত। শুধু চশমাটি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংগ্রহশালা থেকে তাঁর দেখার সুযোগ হয়েছে। তাঁর দাবি, এমন ডিজিটাল পোর্ট্রেট রেশটোরেশন বা রিক্রিয়েশন বিশ্বে বিরল।

হাবিবুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ইন্টারনেট থেকে পাওয়া বিদেশি আলোকচিত্রীদের আর্কাইভ থেকে পাওয়া ছবি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর স্যুটের কাপড়ের ধরন যা পেয়েছেন, তা–ই নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বিদেশি আলোকচিত্রীরা সেই সময়ের আধুনিক ক্যামেরা দিয়ে ছবিগুলো তুলেছিলেন। ডিজিটাল পেইন্টিংয়ে হারিয়ে যাওয়া বার্তা উঠে আসায় নতুন প্রজন্ম অনেক উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিচ্ছবির ওপর আঁকা ‘দ্য ফাদার’ পেইন্টিংটি মূলত তাঁর স্মৃতিকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার বাসনায় তৈরি করেছেন শিল্পী। পেইন্টিংয়ের নিখুঁত কাজ যেমন আগামী প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শনকে জানতে উৎসাহিত করবে, তেমনি বর্তমান ও আগামীর ডিজিটাল আর্টিস্ট, ডিজাইনার ও ফটোগ্রাফারদের অনুপ্রাণিত করবে।

হাবিবুল্লাহ আল ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাবনা থেকে আমি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে অন্তত একটি ছবিকে প্রকৃত রূপে ফিরিয়ে আনা যায় কি না, যেটা আমরা অফিশিয়ালি ব্যবহার করতে পারব, যা হবে আন্তর্জাতিক মানের এবং ছবিটির আবেদন থাকবে বহুদিন, শতাব্দী থেকে শতাব্দী পর্যন্ত।’