মতপার্থক্য থাকবে, দেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক রহমান

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তারেক রহমান। শনিবার বিকেলে আশুগঞ্জের আব্বাস উদ্দিন খান মডেল কলেজ মাঠেছবি: প্রথম আলো

দেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। আমরা বসব, আলোচনা করব। এক আলোচনায় শেষ না হলে আবার আলোচনায় বসব।...কিন্তু বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যদি মাত্রাতিরিক্ত আলোচনা করি, রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে আমরা পিছিয়ে যাব। রাষ্ট্র পুনর্গঠন থেকে যদি আমরা পিছিয়ে যাই, তাহলে এই দেশ ও দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

আজ শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এ কথা বলেন। জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার আব্বাস উদ্দিন খান মডেল কলেজে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

তারেক রহমান বলেন, ‘যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা বিগত ১৭টি বছর আন্দোলন করেছি, সেই স্বৈরাচার আজ পলাতক। তারা বিভিন্নভাবে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু বসে নেই। বিভিন্ন দাবিদাওয়ার অসিলায় বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। স্বৈরাচারের মাথাটা পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু স্বৈরাচারের কিছু কিছু অবশিষ্ট রয়ে গেছে বাংলাদেশে। এরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে, আবার দেশকে তাদের দখলে নিতে। তাদের এই লক্ষ্য আমরা হাসিল করতে দিতে পারি না। দেশের মানুষকে যদি রক্ষা করতে হয়, সর্বোপরি বাংলাদেশকে যদি রক্ষা করতে হয়, তাহলে আমাদের সবাইকে যেকোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। আমরা বসব, আলোচনা করব। এক আলোচনায় শেষ না হলে আবার আলোচনায় বসব। আলোচনার মাধ্যমেই আমরা সমস্যার সমাধার খুঁজে বের করব। আমাদের অনেক কাজ। দেশকে পুনর্গঠনের কাজ। দেশের সামনে আমরা রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠনের ৩১ দফা রূপরেখা দিয়েছি। সেটির মধ্যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সন্তানদের শিক্ষাব্যবস্থাকে কীভাবে করব, তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া আছে। এই দেশের বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও কৃষির জন্য আমরা কী কী করতে চাই, তার কথাও উল্লেখ করা আছে। সমগ্র দেশকে পুনর্গঠন করার জন্য আমরা কী করতে চাই, সেই কথাগুলো বলা আছে।’

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘আজ যদি নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমরা তর্কে লিপ্ত থাকি, তাহলে দেশ ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে যাবে। কিনারা থেকে দেশ পড়ে যাবে। কিনারা থেকে দেশকে ওঠানো যাবে না। আজকে যদি আমরা শুধু তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত থাকি, সবচেয়ে বেশি লাভবান কে হবে? সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে পালিয়ে যাওয়া সেই স্বৈরাচার। দেশ ও দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে আপনাদের (বিএনপি) দিকে। আপনারা কীভাবে দেশকে পুনর্গঠন করবেন, কীভাবে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’

বিএনপির শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বিভিন্ন মতামত থাকতেই পারে। বিভিন্ন বিষয় সেটি রাজনীতির বিষয় হোক। আগামী দিনের সংসদ কীভাবে পরিচালিত হবে, সংসদের মেয়াদ কত হবে, একজন মানুষ কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে, এ রকম বিভিন্ন বিষয় থাকতে পারে। কিন্তু সেই বিষয়গুলো আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে সক্ষম। সেই বিষয়গুলো নিয়ে যদি আমরা মাত্রাতিরিক্ত আলোচনা করি, রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে আমরা পিছিয়ে যাব। রাষ্ট্র পুনর্গঠন থেকে যদি আমরা পিছিয়ে যাই, তাহলে এই দেশ ও দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘পৃথিবীর যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে আমরা দেখি, তাদের মধ্যেও বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক থাকে। কিন্তু দিন শেষে সেই বিতর্কের বিষয়গুলো তারা জনগণের ওপর ছেড়ে দেয় এবং জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়; অর্থাৎ বিভিন্ন মতামত বিভিন্ন ব্যক্তি বা দলের পক্ষ থেকে জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হয়। জনগণের কাছে সেই দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়। জনগণ যেটিকে গ্রহণ করবে, সেটিকেই গ্রহণযোগ্য হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। সেটি করার উপায় কী? সেটি করার একমাত্র উপায় হচ্ছে নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচন।’

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘কাজ একটি, লক্ষ্য একটি, কথা একটি—দেশ পুনর্গঠন করতে হবে। দেশ গড়ে তুলতে হবে। দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এটিই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা ও শপথ। যেকোনো মূল্যে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, ঐক্য, ঐক্য, ঐক্য। ঐক্য ছাড়া কোনো কাজে আমরা সফল হতে পারব না।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা, কুমিল্লার বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিম ভূঁইয়া, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক খালেদ হোসেন (মাহবুব), জেলা বিএনপির সদস্য কবির আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম ও সদস্য জহিরুল হক।