‘এখন ছইল দুইটাক কায় দেখবে, সংসার কেমন করি চলবে’

বজ্রপাত
ফাইল ছবি

স্বজন হারানো মানুষের কান্না আর মাতমে ভারী হয়ে উঠেছে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের চকনদী গ্রামের বাতাস। রংপুরের পীরগঞ্জে একটি ইটভাটায় কাজ করার সময় বজ্রপাতে মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের বাড়ি এই গ্রামে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের চকনদী গ্রামের সিরাজুলের ছেলে সিয়াম (২০), আল আমিনের ছেলে শাহাদত (২৫) ও আয়তালের ছেলে রাশেদুল (২৪)। সিয়াম ও শাহাদত অবিবাহিত হলেও রাশেদুল বিবাহিত।

রাশেদুলের দুই মেয়ের মধ্যে একজনের বয়স ছয় বছর, অন্যজনের দুই বছর। মেয়েদের খুব আদর করতেন তিনি। মৃত্যুর পর সেই কথাই বারবার বলছিলেন তাঁর স্ত্রী রিক্তা বেগম। আহাজারি করতে করতে তিনি বলছিলেন, ‘এখন ছইল দুইটাক কায় দেখবে। কায় মুখোত ভাত তুলি খাওয়াইবে। সংসার কেমন করি চলবে।’ কান্না করে এসব কথা বলতে বলতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। বড় মেয়ে নিথর দেহ বাবার পাশে ছুটে যাচ্ছে, হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছে।

মারা যাওয়া সিয়ামের চাচা সোহাগ হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার সময় অপর প্রান্ত থেকে চকনদীর শোকাহত পরিবারের শুধু কান্নার ধ্বনি ভেসে আসছিল। এরই মধ্যে সোহাগ হোসেন বলেন, বিকেলে টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছিল। মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ চমকানো আর বিকট শব্দ। কিছুক্ষণ পর খবর এল এই বজ্রপাত পড়েছে ইটভাটায়। গ্রামেরই তিনজন মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে তাঁর ভাতিজাও রয়েছেন।

আরও পড়ুন

মুঠোফোনে কথা বলতে বলতেই ওপর থেকে শোনা যায় সিয়ামের মা সেতারা বেগমের আহাজারি। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘সকালবেলা ছইলটা হাসিমুখে বাড়ি থাকি গেইল। আর বিকেলে লাশ হয়া আসিল।’ সিয়ামের বাবা সিরাজুল ইসলাম দিনমজুরি করেন। তাঁর আয়ে সংসার চলে না। ছেলের আয়ের ওপর পরিবারটি নির্ভরশীল ছিল বলে জানান স্থানীয় ব্যক্তিরা।

সিয়ামের চাচা সোহাগ হোসেন বলেন, সিয়াম ইটভাটার ট্রলিতে ইট ওঠানামা করতেন। সকালে কাজে যান, আর সন্ধ্যার পর বাড়িতে আসেন। দুই ভাই–বোনের মধ্যে সিয়াম বড়। ইটভাটা থেকে প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পেতেন। সেই টাকা দিয়ে তাঁদের সংসার চলত। এখন কীভাবে সংসার চলবে, তা নিয়ে সিয়ামের বাবা সিরাজুল ইসলাম নির্বাক হয়ে পড়েছেন। সিয়ামের একমাত্র ছোট বোন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

নিহত শাহাদতের বাবা আল আমিনও দিনমজুরির কাজ করেন। শাহাদতের বাবার প্রতিদিন কাজ জোটে না, তখন শাহাদতের টাকায় চালসহ তরিতরকারি কেনা হতো। এখন কীভাবে তাঁদের সংসার চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। দুই ভাই–বোনের মধ্যে শাহাদত ছিলেন বড়।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় একটি ইটভাটায় কাজ করার সময় মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বজ্রপাতে পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বত্রিশমাইল বিটিসি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া অন্য দুজন হলেন সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট তিলকপাড়া গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে নাজমুল (১৮) ও বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার কবুলপুর গ্রামের জব্বারের ছেলে জলিল (৩৫)। এ ঘটনায় মেহেদুল ইসলাম নামের আরেক শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাঁর বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নে রসুলপুর গ্রামে।