ঢলের সঙ্গে কুমিল্লায় এক দিনে ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি, পানিবন্দী লাখো মানুষ

গোমতী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত সেচের লাইন দিয়ে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কামাড়খাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

অব্যাহত বৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানিতে কুমিল্লার তিন উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এদিকে গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরও বাড়তে পারে। গতকাল বুধবার থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। জেলায় গতকাল পর্যন্ত ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাতটায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাঁধ রক্ষায় সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন, পাউবো, উপজেলা প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা কাজ করছেন। বাঁধের বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অংশ দিয়ে গতকাল থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। আজও একই অবস্থা।

লোকালয়ে নদীর পানি ঢোকায় আতঙ্কিত লোকজন বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কামাড়খাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

আবহাওয়া অধিদপ্তর কুমিল্লার টেলিপ্রিন্টার অপারেটর ছৈয়দ আরিফুর রহমান জানান, কুমিল্লায় গত ২৪ ঘণ্টায় ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জে ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে শত শত মাছের ঘের, আউশ ধান ও আমনের বীজতলা। এ ছাড়া আদর্শ সদর, লাকসাম, বুড়িচং, বরুড়া, দেবীদ্বার, মুরাদনগর ও দাউদকান্দির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার নদীর চর, তীরবর্তী শাকসবজির খেতসহ ফসল তলিয়ে গেছে। কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের উপজেলা নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও চৌদ্দগ্রামের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

নাঙ্গলকোট উপজেলার কাশিপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল খায়ের বলেন, তিন দিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। উপজেলার অধিকাংশ গ্রামে পানি উঠেছে বলে তিনি জানান।

প্রবল স্রোতে গোমতী নদীর ওপর নির্মিত কাঠের তৈরী সেতুটি ভেঙে গেছে। এতে ৪৩টি গ্রামের সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার কুমিল্লার তিতাস উপজেলার আসমানিয়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চান্দিশকরা এলাকার আবদুল গফুর বলেন, গত ৪০ বছরেও এমন পানি দেখেননি। পুকুর-বীজতলা সব পানিতে তলিয়ে গেছে।

মনোহরগঞ্জেও সব গ্রাম পানিতে ডুবেছে। পোমগাঁও এলাকার বাসিন্দা নুর হোসেন বলেন, ‘আমাদের অবস্থা ভয়াবহ। আজ কোনো রকম খেয়েছি। আগামীকাল কী করব কিছুই বুঝতেছি না।’

কুমিল্লা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, জেলায় গতকাল পর্যন্ত ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আজ আরও কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র বাড়তে পারে। বন্যাদুর্গতদের চাল ও শুকনা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।