সরকারি গাড়ি ব্যবহৃত হয় ব্যক্তিগত কাজে

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ২ হাজার ৪৭৭ সিসির গাড়িটি নিয়ে কর্মস্থল থেকে তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহে যাতায়াত করেন।

জামালপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার ব্যবহৃত সরকারি গাড়ি। গত শনিবার ময়মনসিংহ শহরের আর কে মিশন রোড এলাকায় ওই কর্মকর্তার বাসার গ্যারেজে
ছবি: প্রথম আলো

জামালপুরে এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত যাতায়াতে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। গাড়িটি নিয়ে তিনি প্রায় দিনই ময়মনসিংহ শহরে বাসা থেকে জামালপুরে তাঁর কর্মস্থলে যাতায়াত করেন।

ওই কর্মকর্তার নাম আলমগীর হোসেন। তিনি জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা হিসেবে চলতি বছরের ৬ মার্চ জামালপুরে যোগদান করেন। ময়মনসিংহ শহরের আর কে মিশন রোডে নিজের বাসায় তাঁর পরিবার থাকে। ওই বাসা থেকে তিনি প্রায় দিনই সরকারি গাড়ি নিয়ে জামালপুরে তাঁর কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। তাঁর কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের দিকে সেতু-কালভার্ট প্রকল্প সরেজমিনে দেখার জন্য গাড়িটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জামালপুর জেলার জন্য বরাদ্দ দেয়। এর পর থেকে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তারা ২ হাজার ৪৭৭ সিসির জিপ গাড়িটি ব্যবহার করে আসছিলেন।

দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি জামালপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত কাজে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করাও বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে। এটি রাজস্ব ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্তমান জ্বালানি ব্যয় সাশ্রয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর সামিল। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন জাহাঙ্গীর সেলিম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই কর্মকর্তা গাড়িটি নিয়ে তাঁর ময়মনসিংহের বাসায় যান। গত রোববার সকালে গাড়ি নিয়ে আবার কর্মস্থলে আসেন। জামালপুর থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব ৫৯ কিলোমিটার। তাঁর বাসা পর্যন্ত আরও কয়েক কিলোমিটার যেতে হয়। গাড়িটি ডিজেলচালিত। এক লিটার তেল দিয়ে গাড়িটি পাঁচ কিলোমিটার চলতে পারে। সেই হিসাবে জামালপুর থেকে ময়মনসিংহ যেতে-আসতে ২০ লিটার তেল লাগে। সপ্তাহে তিন দিনও যদি গাড়িটি দিয়ে ময়মনসিংহে যাতায়াত করেন। সেই হিসাবে মাসে ১৫ দিন হয়। আর ১৫ দিনও যদি তিনি ওই গাড়িতে ময়মনসিংহে যাতায়াত করেন তাতে কমপক্ষে ৩০০ লিটার তেল লাগে শুধু ময়মনসিংহে যাতায়াতে। ৮০ টাকা লিটার (আগের দাম) হিসাবে প্রতি মাসে ২৪ হাজার টাকা তেল বাবদ তাঁকে খরচ করতে হয়। তাঁর এই তেল খরচের টাকার জোগান দেন উপজেলাগুলোর পিআইওরা।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এই গাড়িতে সরকারি তেলের কোনো বরাদ্দ নেই। গাড়ি তো বেশি একটা ব্যবহার করি না। নিজের টাকায় গাড়ি চালাতে হয়। গাড়ির সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ফলে গাড়ি ময়মনসিংহে নিয়ে যেতে হয়েছিল। অন্যথায় ব্যক্তিগত কাজে এই গাড়ি ব্যবহার করি না। আসলেই জানা ছিল না, গাড়িটি জেলার বাহিরে নিয়ে যাওয়া যাবে কি না, এর পর থেকে আর এমন হবে না।’ প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক গত শনিবার থেকে এ বিষয়ে বক্তব্য ও তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন। ওই কর্মকর্তা রোববার ময়মনসিংহে নিজের বাড়িতে যাননি। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই গাড়ির চালক মো. নাসির। এখন থেকে রাত্রীযাপনের জন্য জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকতার নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার রেস্টহাউসে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সদর উপজেলার পিআইও কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ওই গাড়ির চালক মো. নাসির বলেন, ‘কোনো কোনো সপ্তাহে তিন আবার চার দিনও যান। গাড়ি যখন মাঝেমধ্যে যায়, তখন ওনার (কর্মকর্তা) বাসায় থাকে। গাড়িটির সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে এই সপ্তাহে গাড়িটি ময়মনসিংহে মেরামত করতেই নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়িটি সেতু-কালভার্ট প্রজেক্টের। আগে ১৮০ লিটার তেলের বরাদ্দ ছিল। গত দুই বছর থেকে এই গাড়ির কোনো তেলের বরাদ্দ নেই। মাঝেমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে যখন যাই, তখন পিআইও স্যারদের কাছ থেকে তেল নিয়ে ভরি।’