সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের ভান্ডারে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ওষুধ ও প্যাথলজি সামগ্রী মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। বিপুল পরিমাণ ওষুধ কীভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ হলো, বিষয়টি তদন্ত করতে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলছেন, মৌখিকভাবে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওষুধগুলো সরবরাহ করেছিল। ওষুধগুলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হেফাজতে থাকলেও নিয়মানুযায়ী নথিভুক্ত করা হয়নি। কার্যাদেশ না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিলও দেওয়া হয়নি। এ জন্য ওষুধগুলো রোগীদের সেবায় সরবরাহ করা হয়নি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের শুরুর দিকে মেয়াদোত্তীর্ণ এসব ওষুধ ও প্যাথলজি সামগ্রী হাসপাতালে সরবরাহ করে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়কের মৌখিক নির্দেশে তৎকালীন ভান্ডাররক্ষক সুলেমান আহমদ ওষুধগুলো সংগ্রহ করে হাসপাতালের ভান্ডার ও বারান্দায় রেখেছিলেন। পরে ওই বছরের ১২ মে তত্ত্বাবধায়ক (উপপরিচালক) হিসেবে যোগ দেন মো. মাহবুবুর রহমান। তিনি এসব ওষুধ ও প্যাথলজি সামগ্রী সরবরাহের কোনো কার্যাদেশ না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল দেননি। এ জন্য ওষুধগুলো পড়ে ছিল।
তৎকালীন ভান্ডাররক্ষক সুলেমান আহমদ এখন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে কর্মরত। তিনি জানান, ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনে তখনকার তত্ত্বাবধায়কের মৌখিক নির্দেশনায় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসব ওষুধ ও প্যাথলজি সামগ্রী সরবরাহ করেছিল। এরপর তিনি সেগুলো রাখেন। কিন্তু ঠিকাদারকে বিল না দেওয়ায় ওষুধগুলো নথিভুক্ত যুক্ত করা হয়নি। পরে তিনি বদলি হয়ে যাওয়ায় ওষুধের বিষয়ে আর কিছু জানেন না।
সুলেমান আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছিল ওষুধগুলো রাখার জন্য। পরে এগুলো নিয়মানুযায়ী আর ভান্ডারে যুক্ত করার নির্দেশনা পাইনি। যেহেতু ঠিকাদার বিল পায়নি, আমরাও নিয়মানুযায়ী এগুলো রাখিনি। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের কোনো ক্ষতি নেই।’ তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জানাতে পারেননি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাহবুবুর রহমানকে গত ১০ আগস্ট সুনামগঞ্জ থেকে বদলি করা হয়েছে। এখনো নতুন তত্ত্বাবধায়ক যোগদান করেননি। মাহবুবুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগে ওই ওষুধ আনা হয়। নিয়মানুযায়ী তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। তিনি বারবার বলার পরও হয়নি। পরে নিয়মানুযায়ী সরকারি ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড’ থেকে ওষুধ কেনা হয়েছে। হাসপাতালে ওষুধের সংকট ছিল না, এখনো নেই। তিনি বলেন, ‘আমাকে সমঝে না দিলে আমি তো সেগুলো ব্যবহার করতে পারি না। পরে স্টোরের ব্যবস্থাপনার জন্য আমি কমিটি করে দিয়েছিলাম, যাতে কোনো অনিয়ম না হয়।’
ওই ওষুধ কীভাবে আনা হয়েছে, কেন রোগীদের সরবরাহ করা হয়নি, কীভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ হলো, ঘটনায় কারা জড়িত—এ বিষয়ে তদন্ত করতে ১০ সদস্যের একটি কমিটি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া দুঃখজনক। এগুলো সাধারণ মানুষ পেলে নিশ্চয়ই উপকৃত হতেন। এখানে কোনো অনিয়ম বা কারও গাফিলতি থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১ হাজার ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষ সেবা নেন। ভর্তি রোগী থাকেন সাড়ে তিন থেকে চার শ। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ আছে। যে ওষুধ নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটির বিষয়ে তদন্ত হবে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সুমন বণিক বলেন, আগের তত্ত্বাবধায়ক বদলি ও নতুন তত্ত্বাবধায়ক যোগদান না করায় তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে আছেন। ওষুধগুলো অনেক আগে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।