গৌরীপুরে অধ্যক্ষকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করার ভিডিও ভাইরাল
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে দেওয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ধেরুয়া কড়েহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদকে একাধিক ব্যক্তির সহায়তায় প্রতিষ্ঠানের বাইরে বের করে দিচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার এ ঘটনায় এলাকাবাসী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। তাঁরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দিয়েছেন।
অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদের ভাষ্য, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে থেকেই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চলছিল। পরবর্তী সময়ে বিরোধ আরও বাড়ে। মব তৈরি করে তাঁকে আসতে বাধা দেওয়া হয়। তাঁকে দায়িত্ব ও বেতন থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছিল। কিন্তু তিনি নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে যেতেন। গত বৃহস্পতিবার এনটিআরসিএর নতুন শিক্ষকদের যোগদানের বিষয়ে কথা বলতে গেলে আনোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন ধাক্কাতে ধাক্কাতে তাঁকে বের করে দেন। তিনি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
গোলাম মোহাম্মদের অভিযোগ, ‘আনোয়ার হোসেন একটি চক্রের নেতৃত্ব দেন। তাঁরা আমার কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। টাকা না দেওয়ায় আমার ওপর নির্যাতন চলছে।’
স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য, গত বছরের জুলাইয়ে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। এরপর ৫ আগস্ট গোলাম মোহাম্মদকে সরিয়ে ধর্মের শিক্ষক সাজেদুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়। এ নিয়ে এলাকায় দুটি পক্ষ তৈরি হয়।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগের পর তদন্ত শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তবে রাজনৈতিক চাপে আবারও পূর্বের অধ্যক্ষকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি।’
অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদের করা অভিযোগে আনোয়ার হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দিদারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এটি মামলা হওয়ার মতো ঘটনা নয়। শিক্ষকের অভিযোগটি প্রসিকিউশন আকারে আদালতে আজ দুপুরে পাঠানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ঘটনার সময় সেখানে দুজন শিক্ষক ছিলেন। তাঁরা যেহেতু সরকারি চাকরি করেন, তাই তাঁদের দপ্তরে আগামীকাল প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
এ ঘটনায় শুক্রবার ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সামনে এবং বাজার এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়। সেখানে গৌরীপুর পৌর বিএনপির সদস্যসচিব সুজিত কুমার দাস বলেন, ‘এ ন্যক্কারজনক ঘটনায় আমরা লজ্জিত। শিক্ষকের মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। প্রশাসনকে বলতে চাই, আনোয়ার হোসেন মাস্টারসহ জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করুন।’
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন অচিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জায়েদুর রহমান, ব্যবসায়ী আবুল কালাম, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. আবদুর রশিদ প্রমুখ।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন স্কুল চলাকালে কীভাবে এ ঘটনায় জড়ালেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গৌরীপুরের ইউএনও আফিয়া আমীন বলেন, ‘ভিডিওটি আমি দেখেছি। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’