প্রচারে চলছে কথার লড়াই

নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী লড়ছেন। তবে আওয়ামী লীগের তিনজন নেতার মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন প্রার্থীর পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো নগর। গতকাল বিকেলে নগরের চারপাড়ায়ছবি: প্রথম আলো

জমে উঠেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রচার–প্রচারণা। মেয়র পদের প্রার্থীরা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ছুটছেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে। দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। প্রার্থীরা একে–অপরের সমালোচনা করতেও ছাড়ছেন না। 

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের তিনজন নেতার মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। এ তিন নেতা হলেন সদস্য সাবেক মেয়র ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেসামুল আলম ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাদেকুল হক খান মিল্কি (টজু)।

নির্বাচনে প্রচারণায় এ তিন প্রার্থী প্রতিদিন গণসংযোগ করছেন। ইকরামুল হক ময়মনসিংহ পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ১৫ বছর ধরে মেয়র ছিলেন। ইকরামুল হকের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এহতেসামুল ও সাদেকুল গত ১৫ বছরে ময়মনসিংহ নগরের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়া ও বিভিন্ন নাগরিক দুর্ভোগ তুলে ধরছেন ভোটারদের কাছে। পাশাপাশি তাঁরা নির্বাচিত হলে এসব সমস্যা ও সংকট থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

মেয়র পদে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী এহতেসামুল আলম গত বুধবার বিকেলে থেকে রাতে কয়েকটি নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দেন। সন্ধ্যায় ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুতিয়াখালিতে একটি সভায় তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের করের বোঝা নাগরিকদের জন্য একটি বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাঁরা আগে ২০০ টাকা কর ছিল, তাঁর এখন ২ হাজার টাকা। আমি একটা ঘোষণা দিচ্ছি, আমাকে যদি মেয়র নির্বাচিত করেন, তাহলে সব ধরনের করের বোঝা অর্ধেক করে ফেলব।’

নির্বাচনের মাঠে বেশ দাপটের সঙ্গে বেড়াচ্ছেন হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদেকুল হক খান। নির্বাচনী প্রচারে তাঁর স্লোগান ‘নগরপিতা নয়, সেবক হতে চাই’। ইতিমধ্যে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে নিজের ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।

বুধবার রাতে সাদেকুল একটি নির্বাচনী পথসভায় বলেন, হোল্ডি টেক্স একটা বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ শহরটি সারা পৃথিবীর মধ্যে ধীরগতির শহর হিসেবে ৯ নম্বরে। এ ধীরগতির শহর হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট করা এবং ভাঙার কারণে। নতুন করে ড্রেন করায় গত ১৫ বছর আগে যাঁরা বাড়ি করেছেন, তাঁদের বাড়ি সড়ক থেকে নিচে পড়ে গেছে। বৃষ্টি হলে পানি ওঠে। 

সিটি করপোরেশনের সেবা নিয়েও সমালোচনা করেন সাদেকুল হক। তিনি বলেন, ‘একটি জন্মনিবন্ধন করতেও তিন দিন যেতে হয়। কাজেই জনগণ এখন পরিবর্তন চায়। আমরা এ শহরকে ধুলামুক্ত করতে চাই। আমরা এ নগরকে ভালোবাসি। আমরা একটি পরিচ্ছন্ন শহর চাই। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিশ্রুতি দিতে পারি, যদি আপনারা আমাকে নির্বাচিত করেন, তাহলে হোল্ডিং টেক্স পুনরায় বিবেচনা করে আপনাদের সাধ্যের মধ্য আনা হবে।’ 

নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে দেখা করছেন মেয়র প্রার্থী ইকরামুল হক। নির্বাচনী প্রচারণায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আবারও ভোট চাইছেন।

নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্যে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সমালোচনাও করছেন ইকরামুল। বুধবার রাতে নগরের ভাটিকাশর এলাকায় একটি নির্বাচনী সভায় ইকরামুল প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থীর উদ্দেশে বলেন, ‘তিনি সিটি করপোরেশনের সীমানা থেকে তিন-চার কিলোমিটার দূরে গিয়ে ভোট চাইতে শুরু করেন। পরে ভোটাররা বলেন, “আমরা তো কিছু দিন আগে সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়েছি। এখন আবার কী নির্বাচন”। তখন ওই প্রার্থী ভোটারদের বলেন, “আমি সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচন করছি, আপনাদের কাছে ভোট চাইতে এসেছি”। ওই সময় ভোটাররা বলেন, “আমরা সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা নই। আপনি সিটি করপোরেশনের সীমানা থেকে তিন-চার কিলোমিটার দূরে চলে এসেছেন”। ইকরামুল হক বলেন, যিনি সিটি করপোরেশনের সীমানা চেনেন না, তিনি কী করে নগরবাসীর সেবক হবেন।’ 

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল হক ও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী শহিদুল ইসলামও প্রতিদিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে জনসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

আগামী ৯ মার্চ ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন ছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৬৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩টি ওয়ার্ডে ১৪৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।