পদ্মা সেতু থেকে ঝাঁপ দেওয়া যুবকের সন্ধান মেলেনি

পদ্মা নদীতে ঝাপ দেওয়ার আগে ভিডিওতে নিজের ক্ষোভের কথা বলেন মো. নুরুজ্জামান
ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

জাতীয় শোক দিবসে পদ্মা সেতু থেকে ঝাঁপ দেওয়া যুবকের সন্ধান এক দিন পরেও পাওয়া যায়নি। সোমবার দুপুরে তিনি সেতু থেকে পদ্মায় ঝাঁপ দিয়েছিলেন। সেতুতে ঝাঁপ দেওয়ার আগে তিনি মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিওতে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে না পারার ক্ষোভের কথা বলেছিলেন।

মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পদ্মা নদীতে খোঁজাখুঁজি করে ওই যুবকের সন্ধান পাননি উদ্ধারকারীরা। এর আগে গতকাল সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে সেতুর মাওয়া প্রান্তে এসে প্রাইভেট কার থেকে নেমে পদ্মায় ঝাঁপ দেন ওই যুবক।

নিখোঁজ যুবকের নাম মো. নুরুজ্জামান (৩৮)। তিনি পোশাক তৈরির কারখানার শ্রমিক ছিলেন। নুরুজ্জামান ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার চোরাইল এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে। তাঁর কর্মস্থল ছিল ঢাকার ডেমরা এলাকায়। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরের উত্তরপাড়া এলাকায় ভাড়াবাড়িতে থাকতেন।

সোমবার জাতীয় শোক দিবসে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিতে গিয়েছিলেন নুরুজ্জামান ও ওমর ফারুক। সেখানে ফুল দিতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে দুপুরে তাঁরা বাড়ির উদ্দেশে সেতুর পশ্চিম পাশের লেন দিয়ে পার হচ্ছিলেন। গাড়ি ধীরগতির ছিল। তখন নুরুজ্জামান গাড়ি থেকে নেমে সেতুর রেলিংয়ে উঠে নদীতে ঝাঁপ দেন।

ঝাঁপ দেওয়ার আগে গাড়িতে বসে ভিডিও করেন নুরুজ্জামান। ভিডিওতে নুরুজ্জামানকে বিষণ্ন দেখাচ্ছিল। তিনি বারবার আক্ষেপের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাঁর আবেগ–অনুভূতির কথা বলছিলেন। ফুল দিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করছিলেন।
নুরুজ্জামান ভিডিওতে বলেন, ‘ফুল দিতে গিয়ে দেখলাম, বড় বড় এমপি-মন্ত্রীরা, তাঁদের লোকজন এবং প্রশাসন। তারাই সব, আমরা কি কিছু না। জাতির পিতা মানে আমাদের সবার পিতার মতো। পিতা বানালেন, কিন্তু পিতার মতো পাইলাম না। বঙ্গবন্ধু হইলেন কিন্তু বন্ধুর মতো সম্মান দিতে পারলাম না। খুব ইচ্ছা ছিল, তাই তাহাজ্জুদ নামাজ পইড়া, ফরজ নামাজ পইড়া, বেশি টাকায় গাড়ি ভাড়া কইরা তারপর শ্রদ্ধা জানাইতে আসছিলাম। আমার কষ্টের দাম কে দিবো! জাতির পিতার প্রতি কি আমাদের ভালোবাসা মিথ্যা! বলার ভাষা নেই। কষ্টে আমার বুক ফাইট্টা যাইতাছে। আমি সাধারণ মানুষ। আমার কথার দাম কেউ দিতে পারেন, আবার না–ও দিতে পারেন। বিষয়টা কিন্তু ছোট না।’

আরও পড়ুন

ওই গাড়ির চালক আরিফুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দেওয়ার জন্য নুরুজ্জামান ও উমর ফারুক সকালে আমার গাড়ি ভাড়া করে টুঙ্গিপাড়ায় এসেছিলেন। তাঁরা দুজন মাজারে ফুল দিতে গিয়েছিলেন। তাঁদের অনুমতি কার্ড না থাকায় ফুল দিতে দেওয়া হয়নি। দেড় ঘণ্টা পরে ফুল দিতে না পেরে নুরুজ্জামান ও তাঁর বন্ধু ফিরে আসেন। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে আমরা বাড়ির দিকে ফিরছিলাম। সেতুর মাঝে আসতেই নুরুজ্জামান বলেন, গাড়ি থামাও আমি সেতুতে ছবি তুলব। গাড়ি ধীরে ধীরে চালাচ্ছিলাম। আমি তাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি গাড়ি থেকে নেমে সেতুর ওপর থেকে ঝাঁপ দেন।’

নুরুজ্জামানের স্ত্রী সবুরা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী মাত্র সাড়ে ৯ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ১৩ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে সমাধিতে ফুল দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁকে ফুল দিতে দেওয়া হয়নি।

মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক মো. অহিদুজ্জামান মঙ্গলবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবার জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ ফোনের মাধ্যমে ওই যুবকের নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার খবর পাই। সোমবার নৌ পুলিশ একাই খোঁজ করে। মঙ্গলবার সকাল থেকে নৌ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধার কাজে অংশ নেন। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়নি।

পুলিশ পরিদর্শক মো. অহিদুজ্জামান বলেন, নুরুজ্জামানের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা জানিয়েছেন, টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিতে যাওয়ার সময় তিনি খুব হাসিখুশি ছিলেন। তবে কী কারণে তিনি গাড়ি থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।