নাজিরপুর যুদ্ধদিবসে ৬ ঘণ্টায় ৩৮ কিলোমিটার হাঁটলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল

ঐতিহাসিক নাজিরপুর যুদ্ধদিবস উপলক্ষে সাড়ে ৬ ঘণ্টায় ৩৮ কিলোমিটার হেঁটেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল
ছবি: প্রথম আলো

বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পালকে (৭১) এখন দেশব্যাপী অনেকে চেনেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের গল্পের ফেরিওয়ালা। করোনা মহামারিতে ময়মনসিংহের তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে লাশ দাফন, দাহ করাসহ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ৫০ কিলোমিটার ও তিনজন একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণীর সম্মানে ৫২ কিলোমিটার হাঁটাসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এবার তিনি নেত্রকোনার কলমাকান্দার ঐতিহাসিক নাজিরপুর যুদ্ধদিবস উপলক্ষে সাড়ে ৬ ঘণ্টায় ৩৮ কিলোমিটার হেঁটেছেন।

আজ মঙ্গলবার ভোর চারটার দিকে নেত্রকোনা শহরের ছোটবাজার এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে তিনি পদযাত্রা শুরু করেন। তাঁর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, ক্লিনআপ নেত্রকোনা টিম, শিশু ছায়াসহ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রায় ২৫ জন তরুণ ছিলেন। পরে তিনি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গন্তব্যে পৌঁছান। তিনি শহীদ মিনার থেকে বড়াইল বাজার, সিধলী বাজার, আনন্দপুর বাজার, নাজিরপুর হয়ে লেংগুরা সীমান্তে সাত শহীদের সমাধিস্থলে পৌঁছান। হাঁটার সময় মাঝেমধ্যে তিনি বিশ্রাম নেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল প্রথম আলোকে জানান, নেত্রকোনা শহর থেকে কলমাকান্দার সীমান্তবর্তী লেংগুরা সাত শহীদের মাজার এলাকা পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার পথ হেঁটেছেন। তিনি সুস্থ আছেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত হাঁটেন। এর আগে হালুয়াঘাট থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার, ময়মনসিংহ নগর থেকে ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ি পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার হাঁটার রেকর্ড আছে তাঁর।

১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই কলমাকান্দার নাজিরপুরে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে নেত্রকোনার আবদুল আজিজ ও মো. ফজলুল হক, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মো. ইয়ার মামুদ, ভবতোষ চন্দ্র দাস, মো. নূরুজ্জামান, দ্বিজেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, জামালপুরের মো. জামাল উদ্দিনসহ সাতজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নাজিরপুরের অদূরে ভারত সীমান্তসংলগ্ন লেংগুরা এলাকায় ফুলবাড়ীতে ১১৭২ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে তাঁদের সমাহিত করা হয়। তাঁদের শ্রদ্ধা জানাতে বিমল পালের এই উদ্যোগ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পালকে প্রথম আলোর ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ময়মনসিংহ বন্ধুসভার পক্ষ থেকে গত ৯ নভেম্বর সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। বিমল পাল বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িকতার চেতনার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য।’