বিরোধিতা কমেনি, আয়েনের আসনে এবারও মনোনয়ন চাইবেন আসাদুজ্জামান

রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন (বাঁয়ে) ও আগামী নির্বাচনে এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আসাদুজ্জামান
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসন থেকে টানা দুবার রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আয়েন উদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এই আসন থেকে গত নির্বাচনের মতো এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান। গত নির্বাচনেও তিনি এই আসন থেকে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। বিষয়টি নিয়ে দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আয়েন উদ্দিনের সংসদীয় এলাকায় একাধিক পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছিলেন আসাদুজ্জামান। তাঁদের মধ্যে বিরোধিতা কমেনি। দ্বন্দ্বের জের ধরে গত রোববার পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

এর প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিলুপ্ত কমিটিগুলোর নেতারা। তাঁদের ভাষ্য, সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের সঙ্গে আসাদুজ্জামানের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এমন অবস্থায় আসাদুজ্জামানের সঙ্গে বৈঠক করার কারণে সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের নির্দেশে কমিটিগুলো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

৬ মে আসাদুজ্জামান কাটাখালী পৌর এলাকার একজন আইনজীবীর কার্যালয়ে পৌরসভার ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি পৌরসভা লাগোয়া রাজশাহী সিটি করপোরেশনের চারটি ওয়ার্ডে নৌকার মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে গণসংযোগ করার জন্য নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দেন। এরপর আসাদুজ্জামান কাটাখালী বাজারে গণসংযোগ করেন। এসবের জের ধরে পবা উপজেলার রাজনীতির মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে যে আসাদুজ্জামান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পবা-মোহনপুর আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। সে জন্য তিনি গণসংযোগ শুরু করেছেন।

এ খবর শুনে পরের দিনই পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াসিন আলী কাটাখালীতে গিয়ে যেসব নেতা আসাদুজ্জামানের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে বসেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে আসেন, আগামী ২১ জুনের রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে অন্য কোনো নেতার হয়ে কর্মসূচি পালন করা যাবে না। জানতে চাইলে ইয়াসিন আলী এই হুঁশিয়ারি দিয়ে আসার কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি এভাবে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করার সঙ্গে একমত পোষণ করেননি।

নিয়মবহির্ভূতভাবে কমিটি ভাঙার বিরুদ্ধে গতকাল দুপুরে রাজশাহী নগরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিলুপ্ত কমিটিগুলোর নেতারা। এতে বক্তব্য দেন কাটাখালী পৌরসভার (বিলুপ্ত) ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক।

অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এক নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান, দুই নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি সাদেক আলী, তিন নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মতিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক রইদুল ইসলাম, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি দিলবর আলীসহ ১৩ জন নেতা। আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে মানিক বলেন, তাঁরা আসাদুজ্জামানের সঙ্গে বৈঠক করার কারণেই আয়েন উদ্দিনের নির্দেশে নিয়মবহির্ভূতভাবে তাঁদের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে এই অভিযোগ একেবারেই মানতে নারাজ সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। তিনি বলেন, একটি পৌরসভার ওয়ার্ড কমিটি ভাঙার বিষয়টি পৌরসভা ও থানা কমিটির বিষয়। তারপরও তাঁর নামেই সমালোচনা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বিলুপ্ত কমিটির নেতারা কমিটি ভাঙার জন্য তাঁকেই দায়ী করছেন—এই বিষয়ে আয়েন উদ্দিন বলেন, সমালোচিত হওয়ার একটা যোগ্যতা লাগে। সমালোচনা সবাই করতে পারে, এ জন্য যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। আসাদুজ্জামান কেন, আরও ১০ জন নেতা তাঁর আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন। এটা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার। এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই বলে জানালেন তিনি।

এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, তাঁর সঙ্গে বৈঠক করার জন্যই আয়েন উদ্দিনের নির্দেশে ওয়ার্ড কমিটিগুলো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘কাটাখালীর পৌর এলাকার ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করার কথা শুনেই তাদের মনে হয়েছে যে আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাজ করছি। চোরের মন পুলিশ পুলিশ। আমি তো মনোনয়ন চাইবই।’