সাতক্ষীরায় শিক্ষকের পিটুনিতে ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার চার শিক্ষক কারাগারে

রাজপ্রতাপ দাস
ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষকদের পিটুনিতে নবম শ্রেণির ছাত্র রাজপ্রতাপ দাসের (১৫) মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ চারজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে আদালতের মাধ্যমে তাঁদের কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

কারাগারে পাঠানো চার শিক্ষক হলেন কালীগঞ্জে নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মোনায়েম, সহকারী প্রধান শিক্ষক এম এ মুহিত, সহকারী শিক্ষক অবকাশ চন্দ্র খাঁ ও সিদ্ধার্থ রায় চৌধুরী। মামলার আরেক আসামি শিক্ষক মনিরুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মামুন রহমান বলেন, নিহত ছাত্রের বাবা দীনবন্ধু দাসের গতকাল রাতে করা লিখিত অভিযোগ আজ সোমবার মামলা হিসেবে গ্রহণ করে আটক চার শিক্ষককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বেলা একটার দিকে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন
ছাত্রের মৃত্যুর খবর শুনে শত শত মানুষ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে
ছবি: সংগৃহীত

নিহত রাজপ্রতাপ দাসের লাশের ময়নাতদন্ত আজ বেলা দুইটায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। পরে পুলিশি পাহারায় লাশ গ্রামের বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমুলিয়া ইউনিয়নের চণ্ডীপুর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। রাজপ্রতাপের লাশ বাড়িতে এসে পৌঁছালে স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক গাজী নাসিরউদ্দিনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি দল নিহত ছাত্র রাজপ্রতাপের লাশের ময়নাতদন্ত করে। পরে লাশটি আজ বেলা তিনটার দিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। গাজী নাসিরউদ্দিন বলেন, লাশ থেকে নমুনা নিয়ে ঢাকায় ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। ভিসার প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ।

নিহত ছাত্রের চাচা দেবীরঞ্জন দাস বলেন, তাঁদের কাছে রাজপ্রতাপের লাশ হস্তান্তর করা হলেও পুলিশি পাহারায় রাখা হয়েছে। শেষকৃত্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ থাকবে।

রাজপ্রতাপ দাস নিহতের ঘটনায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মঈনুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের দপ্তরে জমা দিতে বলা হয়েছে।

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে ছাত্রের মৃত্যুর খবরে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন। নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রোববার বিকেলে
ছবি: সংগৃহীত

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অজিত কুমার সরকার বলেন, তিনি কালীগঞ্জ সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন তাঁর দপ্তরে জমা দিতে বলা হয়েছে।

নিহত রাজপ্রতাপের এক সহপাঠীর ভাষ্য, গতকাল তার ও এক বন্ধুর জন্মদিন ছিল। এ উপলক্ষে সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবনের একটি ফাঁকা কক্ষে রাজপ্রতাপসহ কয়েক বন্ধু মিলে জন্মদিনের কেক কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় সহকারী প্রধান শিক্ষক এম এ মুহিতের সঙ্গে সেখানে আসেন অবকাশ চন্দ্র খাঁ, মনিরুল ইসলাম, সিদ্ধার্থ রায় চৌধুরীসহ পাঁচ-ছয়জন শিক্ষক। শিক্ষকেরা তাকে ও তার সহপাঠীদের এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। রাজপ্রতাপের বুকে একজন শিক্ষক হাঁটু দিয়ে আঘাত করেন। পরে রাজপ্রতাপ, তাকেসহ চারজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে। বিদ্যালয়ে জন্মদিন পালন করা হচ্ছে কেন, বলে তাদের আবারও চড়থাপ্পড় মারা হয়। এ সময় রাজপ্রতাপ ও সে প্রধান শিক্ষকের পা ধরে মাফ চাইতে গেলে তিনিও তাদের আবার চড়থাপ্পড় মেরে সরিয়ে দেন। পরে একটি কক্ষে আটকে তাদের আবারও লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। এসব ঘটনার পর তারা শহীদ মিনারের ওপর বসে ছিল। এ সময় রাজপ্রতাপ বলে, তার শরীর খারাপ লাগছে। বুকে ব্যথা করছে, বমি বমি ভাব হচ্ছে, মাথা ঘোরাচ্ছে। একপর্যায়ে রাজপ্রতাপ বাড়িতে চলে যায়। এর ২০-২৫ মিনিট পরে সে শোনে, রাজপ্রতাপ মারা গেছে।

আরও পড়ুন