মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে মারধরের শিকার পুলিশ কর্মকর্তা, পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি
অভিযান চালিয়ে মাদকসেবীদের আটক করতে গিয়ে মারধরের শিকার শরীয়তপুরের নড়িয়া থানার এক সহকারী উপপরিদর্শককে (এএসআই) রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার আজ শুক্রবার জানিয়েছেন, মারধরের শিকার এএসআই ফরহাদ হোসেনকে দুই হাত ও দুই পা ভেঙে দিয়েছেন হামলাকারীরা।
এদিকে ওই ঘটনায় করা মামলায় আসামি রবিন মাদবর ও দীপু মাদবরকে ধরতে গিয়ে তাঁদের বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের পরিবারের দাবি, পুলিশ তল্লাশি চালাতে এসে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ির ব্যবহারের জিনিসপত্র ভেঙে দিয়েছে।
নড়িয়া থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে নড়িয়ার কেদারপুর এলাকার চণ্ডীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের একটি কক্ষে বসে ইয়াবা সেবন করছিলেন কয়েকজন তরুণ। খবর পেয়ে সেখানে নড়িয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান চালায় একদল পুলিশ।
অভিযানে ফেরদৌস ইসলাম ওরফে দীপ্ত (১৯), নাজমুল সরদার ওরফে মুন্না (২০), দীপু মাদবর (২৫) ও নয়ন মাদবর (২২) নামের চার তরুণকে আটক করে পুলিশ। খবর পেয়ে তাঁদের আত্মীয়স্বজনেরা গ্রামবাসীকে নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালান। তাঁরা পিটিয়ে এএসআই ফরহাদ হোসেনের দুই হাত ও দুই পা ভেঙে দেওয়া হয়। এ ছাড়া এসআই আকরাম, ইকবাল ও ফয়সালকে পিটিয়ে আহত করা হয়। পুলিশ সদস্যদের মারধর করে আটক ওই চার তরুণকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার নড়িয়া থানার এসআই ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন। তাতে ওই চার তরুণ ফেরদৌস ইসলাম ওরফে দীপ্ত, নাজমুল সরদার ওরফে মুন্না, দীপু মাদবর ও নয়ন মাদবরকে আসামি করা হয়। আর এসআই আকরাম হোসেন বাদী হয়ে ২৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা করেন। ওই দুটি মামলার ৯ আসামিকে গত তিন দিনে গ্রেপ্তার করে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা চণ্ডীপুর উচ্চবিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করেন। তখন নড়িয়া থানা–পুলিশের একটি দল মামলার আসামি রবীন মাদবর ও দীপু মাদবরের বাড়িতে অভিযান চালান। দুই আসামির পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, ওই দুটি বাড়ির ১০টি কক্ষের সব আসবাব, স্টিলের আলমারি, রেফ্রিজারেটর, টিভি, ওয়াশিং মেশিনসহ ব্যবহারের বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়। আজ শুক্রবার তাঁদের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুরের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়।
দীপু মাদবরের ভাই সোহেল মাদবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই ইলেকট্রিক ও স্যানিটারি কাজের ঠিকাদার। ওই দিন হইচই শুনে বিদ্যালয়ের ভেতর গিয়েছিল। হয়রানি করতে পুলিশ তাঁকে মাদক ও মারামারির মামলায় আসামি করেছে। সে যদি অপরাধ করে থাকে, আইন তাকে শাস্তি দেবে। কিন্তু পুলিশ কেন আমাদের বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর করল। সারা বাড়ি তছনছ করে দিয়েছে। ভাত খাওয়ার চাল-ডাল, একটি প্লেটও রেখে যায়নি। এর বিচার আমরা কার কাছে দেব?’
এ বিষয়ে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অমানবিকভাবে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে মাদকের আসামি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের ধরতে গ্রামে পুলিশ গিয়েছিল। কিন্তু কোনো আসামির বাড়িতে ভাঙচুর করেনি। গ্রামের মাদকবিরোধী সচেতন ব্যক্তিরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের বাড়িতে ভাঙচুর চালাতে পারে।
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মাদক নির্মূলের কাজ করতে গিয়ে পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে। আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য মাইকে ডাকাত পড়েছে, এমন ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীকে জড়ো করে পুলিশ সদস্যদের পেটানো হয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তার দুই হাত, দুই পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা পঙ্গু হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তখন কোনো ঘর তছনছ হতে পারে। বিষয়টি জানা নেই।