ভালো মানুষ সেজে বাড়িতে ঢুকে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার মিজানুর রহমান
ছবি: প্রথম আলো

গ্রামবাসীর টুকটাক ঝামেলা বা বিরোধ মিটিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সখ্য হয় মিজানুর রহমান ওরফে মিজানের (৪২)। কিন্তু ভালো মানুষের আড়ালে তিনি একটি পরিবারের সদস্যদের নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ২৬ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করবেন, সেটা কেউ ভাবেননি। শেষ পর্যন্ত সন্দেহের ভিত্তিতে মিজানকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আলোচিত চুরির বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

আজ শনিবার দুপুরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানায় ব্রিফিং করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ওরফে রাজীব এসব তথ্য জানান। ২৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বেগমগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শরীফপুর গ্রামের মো. ফজলুল হকের বাড়ি থেকে ট্রাংকভর্তি ২৬ লাখ টাকা ও বেশ কিছু স্বর্ণালংকার চুরি যায়। ওই ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি করে পুলিশ এসব তথ্য জানায়।

ব্রিফিংকালে পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হওয়া চুরির প্রায় ১৪ লাখ টাকা ও বেশ কিছু সোনার গয়না তুলে ধরা হয়। এ সময় বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ফরিদুল আলম ও তদন্ত দলের তিন উপপরিদর্শক কৃষ্ণ কুমার দাস, ফিরোজ আহমেদ, আহসান হাবীব উপস্থিত ছিলেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, ২৪ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে উপজেলার দক্ষিণ শরীফপুর গ্রামের মো. ফজলুল হকের বাড়িতে ঢুকে স্বজনদের খাবারের সঙ্গে নেশাদ্রব্য মিশিয়ে অচেতন করে ঘর থেকে ট্রাংকভর্তি ২৬ লাখ টাকা ও আলমারি ভেঙে বেশ কিছু স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মর্মে থানায় একটি অভিযোগ আসে। কিন্তু ঘটনায় কে বা কারা জড়িত থাকতে পারেন, সে ব্যাপারে পরিবারের সদস্যরা তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজীব হাসানকে আহ্বায়ক করে একটি বিশেষ দল গঠন করে দেন পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম। তদন্তের একপর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে, প্রতিবেশী মিজানুর রহমান বাদী ফজলুল হকদের পারিবারিক বিভিন্ন ছোটখাটো ঝামেলা মীমাংসা করে দিতেন। সেই সুবাদে তাঁদের (ফজলুল) বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল মিজানের।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, ফজলুল হকের বাড়িতে যে ব্যাংক থেকে তোলা ২৬ লাখ টাকা আছে, সেটি পরিবারের সদস্যরা ছাড়া শুধু মিজান জানতেন। পুলিশ বিষয়টি জানার পর মিজানের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় এবং তাঁর সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়। চুরির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গতকাল শুক্রবার রাতে গ্রামের বাড়ি থেকে মিজানকে আটক করা হয়। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই মিজান জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

অভিযানে উদ্ধার হওয়া টাকা ও স্বর্ণালংকার তুলে ধরে বেগমগঞ্জ থানায় ব্রিফিং করে পুলিশ
ছবি: প্রথম আলো

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, মিজানকে আটকের পর তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর বাড়ির পাশের একজনের তালাবদ্ধ ঘরের তোশকের নিচ থেকে ১৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও প্লাস্টিকের কৌটা থেকে বেশ কিছু স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ওই বাড়ির পাশের পুকুর থেকে ট্রাংকটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানায়, আটক মিজান ঘটনায় জড়িত অন্য ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা দিয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তার এবং চুরির বাকি টাকা উদ্ধারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। আটক মিজানকে চুরির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক বলেন, গ্রেপ্তার মিজানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের একটি মামলাসহ বেগমগঞ্জ ও রমনা থানায় মোট তিনটি মামলা আছে। সব মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।