স্বজনের লাশ দেখতে আসার পথে দুর্ঘটনায় ৩ ভাই নিহত, পাশাপাশি কবরে দাফন

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিন ভাইকে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়। আজ রোববার দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার মহম্মদপুর গ্রামেছবি: প্রথম আলো

পাশাপাশি খোঁড়া হয়েছে তিনটি কবর। স্বজন ও এলাকাবাসী মিলে প্রথমে সুমন মণ্ডল (২৫), এরপর তাঁর ছোট ভাই রিমন মণ্ডল (১৪) এবং সবশেষে তাঁদের চাচাতো ভাই আশিক মোল্লার (২২) লাশ দাফন করে। আজ রোববার দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সদকী ইউনিয়নের দুধরাজপুর-মহম্মদপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাঁদের দাফন সম্পন্ন হয়।

নিহত সুমন, রিমন ও আশিক কুমারখালীর সদকী ইউনিয়নের মহম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা। সুমন ও রিমন পেশায় কাঠমিস্ত্রি। আশিক ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি ভাড়ায় গাড়ি চালাতেন। তিনজনই ঢাকায় থাকতেন।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার রাত আটটার দিকে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ গ্রামে সুমনের বোন শেফালীর শাশুড়ি বার্ধক্যের কারণে মারা যান। খবর পেয়ে সুমন ও রিমন মিলে আশিকের মোটরসাইকেলে লাশ দেখতে গ্রামের বাড়ি আসছিলেন। পথে ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের মাধবপুর কবরস্থান এলাকায় অজ্ঞাত গাড়ির চাপায় তাঁরা নিহত হন। খবর পেয়ে ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশ লাশগুলো উদ্ধার করে স্বজনদের খবর দেয়। আজ বেলা আড়াইটার দিকে লাশগুলো গ্রামে নিয়ে আসার পর জানাজা শেষে দুধরাজপুর-মহম্মদপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন
ছবি: প্রথম আলো

দুপুরে মহম্মদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সুমন, রিমন ও আশিকের বাড়ি পাশাপাশি। আশিকের বাড়িতে মানুষের ভিড়। আহাজারি করছেন মা শিউলি খাতুন ও স্বজনেরা। এ সময় আশিকের মা শিউলি খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি কি জানি, বেটা ওর সাথেই আসতেছে গো। আমি কিছুই জানিনে গো। ওরে সোনা, কিছুই বলে গেল না গো!’

আশিকের বাবা শাহিন মোল্লা বলেন, ‘সুমন আর আশিক বন্ধু ও চাচাতো ভাই। ওদের বাড়ি আসার কথা জানতাম না। সুমনের বোনের শাশুড়ির মৃত্যুর খবর শুনে ওরা বাড়ি আসতেছিল। দিবাগত রাত একটার দিকে পুলিশ ফোনে জানায় দুর্ঘটনার কথা।’

সুমন ও রিমনের বাবা করিম মণ্ডল বলেন, বোনের শাশুড়ির লাশ দেখতে এক মোটরসাইকেলে আসছিলেন তাঁরা। রাস্তা খুব ভাঙা ছিল। পথে ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকায় তিনজনই গাড়ি থেকে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। তখন আরেকটি গাড়ি এসে তাঁদের চাপা দেয়।

মহম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা আক্কাস আলী (৮৫) বলেন, একসঙ্গে এত লাশ দাফনের ঘটনা আগে কোনো দিন ঘটেনি। আত্মীয়স্বজন মাতম করছেন।

তিনজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সান্ত্বনা দিয়েছেন উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মো. আফজাল হোসাইন। তিনি বলেন, এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা অতীতে ঘটেনি। সবাই শোকাহত ও মর্মাহত। সবাই মিলে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে।

কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় কুমারখালীর তিনজন নিহত হয়েছেন। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।