সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মানববন্ধন, দুপুরেই খালের বাঁধ অপসারণ

প্রশাসনকে পাশে পেয়ে বাঁধ অপসারণের কাজে যোগ দেন স্থানীয় লোকজনও। আজ বুধবার দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নেছবি: প্রথম আলো

বুধবার সকাল ৯টা। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তখনো কর্মব্যস্ততা শুরু হয়নি। এরই মধ্যে কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন শতাধিক নারী-পুরুষ। ব্যানার নিয়ে হাতে হাত ধরে তাঁরা দাঁড়িয়ে পড়েন। দাবি জানান সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের কবিরাজের খাল, হরিবল্লভ ও পাচউয়াখালী খালে প্রভাবশালীদের দেওয়া বাঁধ-পাটা অপসারণের।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের সায়রা, পূর্ব সায়রা ও লক্ষ্মীখালী গ্রামের কৃষকেরা বলেন, কিছুদিন আগেই এই খাল খনন করা হয়। সেখানে প্রভাবশালীরা কোথাও মাটি দিয়ে, কোথাও নেট ও বাঁশের বাঁধ (স্থানীয়ভাবে পাটা-বাঁধ হিসেবে পরিচিত) দেন। এই বাঁধের কারণে কৃষি আবাদ ও মৎস্য চাষ ব্যাহত হচ্ছিল। বিভিন্ন সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে অবহিত করেও কাজ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে তাঁরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেন। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে খালগুলো উন্মুক্ত করার জন্য লিখিত আবেদন করেন। তখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালের অবৈধ বাঁধ ও নেট-পাটা অপসারণের আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন।

এরপর দুপুর নাগাদ বাগেরহাট সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এম সাইফুল্লাহ পুলিশ, গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে খালগুলোর বাঁধ কাটতে যান। খবর পেয়ে স্থানীয় শতাধিক নারী-পুরুষ সেখানে জড়ো হন। তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে খালগুলোর অবৈধ কয়েকটি বাঁধ ও শতাধিক নেট-পাটা অপসারণ করেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় খাল উন্মুক্ত হওয়ায় খুশি কৃষক ও স্থানীয় লোকজন।

বাঁশের তৈরি পাটা দিয়ে এভাবেই আটকে দেওয়া হয়েছিল হরিবল্লভ খালটি। বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নে
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় বাসিন্দা বিউটি বেগম বলেন, ‘খালগুলো প্রায় মৃত ছিল। বছর দেড়েক আগে কাটা হয়। এরপরই ক্ষমতাবান লোকজন খাল দখল করে মাছ চাষ শুরু করেন। আমরা খালে নামতে পারতাম না, জমিতে পানি দিতে পারতাম না। আবার তাদের প্রয়োজনে ইচ্ছেমতো লবণপানি ঢোকাত। এখন বাঁধ কেটে খাল উন্মুক্ত করা হয়েছে, আমাদের অনেক সুবিধা হবে।’

বাঁধ কাটায় অংশ নেওয়া অমিত কুমার মৈত্র বলেন, ‘ওরা পাটা ও বাঁধ দিছিল, আমরা বাঁধ ও পাটা কেটে দিয়েছি। এরপর বাঁধ দিতে আসলে, কীভাবে শায়েস্তা করতে হয়, তা গ্রামবাসী জানে। আমাদের সঙ্গে প্রশাসন রয়েছে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য দুলাল রঞ্জন বলেন, ‘সকালে জেলা প্রশাসকের কাছে বাঁধ অপসারণের দাবি জানাতে গেছিলাম। কিন্তু এত দ্রুত কাজ হবে, বুঝতে পারিনি।’ তিনি আরও বলেন, ষাটগম্বুজ ইউনিয়নে আরও খাল রয়েছে, যেসব খালে অবৈধভাবে মাছ চাষ করা হয়। সেসব খালও যদি দখলমুক্ত করা যায়, তাহলে এলাকাবাসী উপকৃত হবে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, স্থানীয়দের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি খালের বাঁধ ও নেট-পাটা অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলায় যেসব খালে অবৈধ বাঁধ ও নেট-পাটা রয়েছে, সেসব পর্যায়ক্রমে অপসারণ করা হবে। এ জন্য সবাইকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ করেন তিনি।