সংবাদ সম্মেলন ডেকে যুবলীগ নেতাকে গুলি করার কথা অস্বীকার করলেন নোয়াখালীর সেই চেয়ারম্যান

নোয়াখালী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন চর জব্বর ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুক। আজ বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকে ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা মো. হোসেনকে (৩১) পায়ে গুলি করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মো. ওমর ফারুক। তিনি সুবর্ণচর উপজেলার চর জব্বর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। বুধবার বিকেলে নোয়াখালী প্রেসক্লাবে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তিনি।

ওমর ফারুক সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। গত ইউপি নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় দলীয় পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওই নির্বাচনে  আনারস প্রতীকে নির্বাচন করে বিজয়ী হন ওমর ফারুক।

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে ওমর ফারুক দাবি করেন, গত ইউপি নির্বাচনে জনগণের রায়ে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী তরিকুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তখন তিনি তাঁকে অনেক সম্মান দিয়েছেন। কিন্তু অল্প কিছুদিন না যেতেই তরিকুল ইসলাম তাঁর অনুসারীদের দিয়ে এলাকার চিহ্নিত চোরসহ বিভিন্ন অপরাধীদের দিয়ে দোকানপাট, বাড়িঘরে চুরিসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করে ইউনিয়নের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অসহনীয় করে তোলেন। ইতিপূর্বে পুলিশের হাতে ধরা পড়া এক চোর আদালতে স্বীকারও করেছেন যে সাবেক চেয়ারম্যানের ইন্ধনে তাঁকে (ওমর ফারুক) প্রশ্নবিদ্ধ করতে তাঁরা চুরির করছেন।

হামলার শিকার মো. হোসেন দাবি করেন, চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ও তাঁর লোকজন তাঁকে অস্ত্রের মুখে প্রাইভেট কারে উঠিয়ে নিয়ে যান। তারপর একটি বাড়িতে নিয়ে তাঁর দুই পায়ে গুলি করেন।

ওমর ফারুক বলেন, গত কয়েক দিনে তাঁর ইউনিয়নে বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটে। ওই সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার চেউয়াখালী এলাকার বাসিন্দারা মো. হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেন। আটকের পর লোকজনের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এরপর লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে পিটুনি দিয়ে আটকে রাখেন। পরে খবর পেয়ে তিনি চৌকিদার পাঠিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান।

মো. হোসেন কখনো যুবলীগ করতেন কি না, তা তাঁর জানা নেই বলেও দাবি করেন ওমর ফারুক।

চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের দাবি, পিটুনিতে আহত মো. হোসেনকে চর জব্বর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর সেখান থেকে একদল লোক ছিনিয়ে নিয়ে যান। এরপর জেলা সদরের হাসপাতালে নিয়ে তাঁকে দিয়ে পায়ে গুলি করার গল্প সাজিয়ে গণমাধ্যমের কাছে প্রচার করেন। প্রকৃতপক্ষে গুলির কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিংবা তাঁর প্রাইভেট কারে করে তিনি মো. হোসেনকে তুলে নেননি। এসব তথ্য তাঁকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য ছড়ানো হয়েছে। তাই তিনি পুরো ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

এদিকে হামলার শিকার মো. হোসেন দাবি করেন, তিনি ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি। গত ইউপি নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলামের পক্ষে কাজ করেন ও টাকাপয়সা খরচ করেন। এ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুক তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরের দিক চেউয়াখালী বাজারের একটি চায়ের দোকানে চেয়ারম্যানের অনুসারী এক যুবকের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ও তাঁর লোকজন ওই চায়ের দোকানে এসে সবার সামনে থেকে তাঁকে অস্ত্রের মুখে প্রাইভেট কারে উঠিয়ে নিয়ে যান। তারপর একটি বাড়িতে নিয়ে তাঁর দুই পায়ে গুলি করেন। পরে স্থানীয় চৌকিদার নুরউদ্দিনকে দিয়ে তাঁকে হাসপাতালে পাঠান চেয়ারম্যান।

সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান চেয়ারম্যানের করা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এসব হাস্যকর অভিযোগ। তিনি তাঁর দায়িত্ব পালনকালে এলাকার মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন, সবাই জানেন। তিনি সব সময় চোর, ডাকাতসহ সব অপরাধীর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাঁর মেয়াদকালে এলাকায় তেমন কোনো অপরাধ ছিল না। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান অপরাধ দমনে ব্যর্থ হয়ে এখন উল্টাপাল্টা বকছেন।