দুই পক্ষের সংঘর্ষে আবদুর রশিদ শেখ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ছবিতে রক্তাক্ত অংশ মুছে দেওয়া হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
ছবি: এ কে এম ফয়সাল

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা ও গুলিতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আজ শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকারি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয় মাঠে সম্মেলনের স্থলে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রশিদ শেখ (৪২), উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম চৌধুরী (৩৫), নাজিরপুর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমার হালদার (৫৫), জুয়েল শেখ (১৮), আখতারুজ্জামান শিকদার (৫৫), সুবোধ (৪২), এনামুল শেখ (২৬), জাকারিয়া ব্যাপারী (৩০), মো. শাওন (৩০), মেজবা হাওলাদার (৩০), সোহাগ মৃধা (৪০), নিক্সন (২৩) ও জাকির হোসেন (২৮)। গুলিবিদ্ধ আবদুর রশিদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে আহত বাকি দুজনের নাম জানা যায়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক কৌশিক সাহা বলেন, আহত নয়জনকে চিকিৎসা দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নাজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমি কাউকে গুলি করতে দেখিনি। তবে গুলি করা হয়েছে বলে কয়েকজনকে চিৎকার করে দৌড় দিতে দেখেছি। হামলা ও সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছে বলে শুনেছি। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’

প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুর ১২টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য আমিরুল আলম প্রমুখ। প্রথম অধিবেশন শেষে বিকেল পাঁচটার দিকে কমিটি গঠনের জন্য দ্বিতীয় অধিবেশন বসে কলেজের একটি কক্ষে। সন্ধ্যার কিছু আগে মাঠে এ কে এম এ আউয়ালের অনুসারীদের সঙ্গে শ ম রেজাউল করিমের অনুসারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় দুটি গুলির শব্দ শোনা যায়। পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পিরোজপুর থেকে এ কে এম এ আউয়ালের সঙ্গে আসা এক ব্যক্তি দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে গুলি করেছেন। উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রশিদ শেখের মাথায় গুলি লেগেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ ফিরোজ আহমেদ অভিযোগ করেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর অনুসারীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। এ সময় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। গোলাগুলি মন্ত্রীর লোকজন করেছেন।

সংঘর্ষের পর সন্ধ্যায় সাড়ে ছয়টার দিকে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন নাজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোশারেফ হোসেন খানকে সভাপতি ও দপ্তর সম্পাদক আশুতোষ ব্যাপারীকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। তাঁরা এ কে এম এ আউয়ালের অনুসারী।

আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমরা সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে নাজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেছি।’ দুই পক্ষের সংঘর্ষের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা কমিটি গঠন নিয়ে কলেজের একটি কক্ষে ছিলাম। বাইরে কী হয়েছে, তা আমি জানি না।’

সর্বশেষ ২০১৪ সালে ২৯ নভেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল। ওই সম্মেলনের আবদুল মালেককে সভাপতি ও মোশারেফ হোসেন খানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছিল। এ উপজেলার রাজনীতিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল এবং প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। এই দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে এত দিন উপজেলায় সম্মেলন করা যায়নি।