নান্দাইলে নদীতে মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু

নান্দাইলে মাছ ধরার জন্য নদীতে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দেওয়া হয়। সেই বাঁধে পাতা জালে আটকা পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে নান্দাইলের আমোদাবাদ গ্রামে
ছবি: প্রথম আলাে

ময়মনসিংহের নান্দাইলে নরসুন্দা নদীতে মাছ ধরার জন্য পেতে রাখা জালে আটকা পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে নদীতে পানির নিচে তল্লাশি চালিয়ে তাদের লাশ উদ্ধার করে ডুবুরি দল। এর আগে গ্রামবাসী চেষ্টা করেও শিশু দুটির সন্ধান পাননি।

মৃত শিশুরা হলো সোহাগ মিয়া (১৩) ও কামরুল ইসলাম (১২)। সোহাগ নান্দাইল পৌরসভার আমোদাবাদ মহল্লার মো. হরমুজ আলীর ছেলে। আর কামরুল একই মহল্লার নজরুল ইসলামের ছেলে। তারা উপজেলার গারুয়া ইবতেদায়ি মাদ্রাসার ছাত্র ছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমোদাবাদ মহল্লার একাধিক ব্যক্তি মাছ শিকারের জন্য নরসুন্দা নদীতে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দিয়ে জাল পেতে রাখেন। স্থানীয়ভাবে মাছ শিকারের এ জালকে ‘ভিম জাল’ বলা হয়। ওই জালের অগ্রভাগের অংশটি খোলা থাকে। শেষের দিকের অংশটি সরু হয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে শেষ হয়। ওই জালের মুখ দিয়ে মাছসহ যেকোনো কিছু একবার ঢুকলে আর বের হতে পারে না।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আজ বেলা আড়াইটার দিকে গোসল করার জন্য ইবতেদায়ি মাদ্রাসার ছয়জন ছাত্র কলাগাছের ভেলায় চড়ে নরসুন্দা নদীতে নামে। শিশুরা ভেলা থেকে নদীর পানিতে লাফ দিচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর তাদের ভেলাটি পানির স্রোতে মাছ শিকারের জন্য পেতে রাখা জালের দিকে যেতে থাকে। একপর্যায়ে বাঁধে ধাক্কা খেলে ভেলাটি উল্টে যায়। এ সময় কয়েকজন শিশু ভিম জালের ভেতরে ঢুকে যায়। নদীর পাড় থেকে দুজন ব্যক্তি এ দৃশ্য দেখে নদীতে নেমে জাল কেটে চারজনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। তবে দুই শিশু জালের সঙ্গে পেঁচিয়ে ভাটির দিকে চলে যায়। তাদের উদ্ধারে নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা পানিতে নেমে উদ্ধারের চেষ্টা চালান। কিন্তু তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে কিশোরগঞ্জ থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এসে নদীতে তল্লাশি চালিয়ে বিকেল পাঁচটার দিকে তাদের লাশ উদ্ধার করে।

নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনা শুনেছেন। এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

শিশু সোহাগকে উদ্ধারের সময় মা হোসনে আরা নদীর পাড়ে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু লাশ উদ্ধারের পর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় কয়েকজন নারী তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এলাকাবাসী বলেন, নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার বেআইনি হলেও সরকারি লোকজনকে কোনো দিন অভিযান চালাতে দেখা যায় না। বাঁধ না থাকলে হয়তো শিশু দুটির মর্মান্তিক মৃত্যু হতো না।