নৌকার প্রার্থী মাঠে তৎপর, প্রচারে নেই স্বতন্ত্র প্রার্থী

যশোর-৪ আসনে প্রচার-প্রচারণা জমে উঠছে। দিনরাত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। প্রচারণায় আছেন জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও তৃণমূল বিএনপির প্রার্থীও। তবে তৎপরতা নেই এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রণজিৎ কুমার রায়ের।

অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলা এবং সদর উপজেলার একাংশ নিয়ে যশোর-৪ আসন। ছয়জন প্রার্থী এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী, বর্তমান সংসদ সদস্য ও বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রণজিৎ কুমার রায় (ঈগল), জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) জহুরুল হক, বিএনএমের সুকৃতি কুমার মণ্ডল (নোঙর), তৃণমূল বিএনপির এম সাব্বির আহমেদ (সোনালী আঁশ) এবং ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ইউনুছ আলীর (মিনার)।

প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোর-৪ আসনে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রণজিত কুমার রায়। এবারও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রচার-প্রচারণায় সরব রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক। দিনরাত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন তিনি। বাইসাইকেল র‍্যালি করেও নৌকার প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। করছেন উঠান বৈঠক ও পথসভা। তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নিচ্ছেন। আসনের বিভিন্ন এলাকা নৌকার পোস্টারে ছেয়ে গেছে। চলছে মাইকে সরব প্রচার।

এনামুল হক বলেন ‘ভোটারদের কাছে যাচ্ছি, ভোট চাচ্ছি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’

জাতীয় পার্টির জহুরুল হক, বিএনএমের সুকৃতি কুমার মণ্ডল এবং তৃণমূল বিএনপির সাব্বির আহমেদও ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাঁরা প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। তাঁদের পোস্টার লাগানো হয়েছে। চলছে মাইকে সরব প্রচার। তবে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ইউনুছ আলীর কোনো প্রচারণা চোখে পড়েনি। তবে অনেক জায়গায় তাঁর মিনার প্রতীকের পোস্টার দেখা গেছে।

তবে এলাকা ঘুরে কোথাও স্বতন্ত্র প্রার্থী রণজিৎ কুমারের পক্ষে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এমনকি তাঁর ঘনিষ্ঠজনরাও এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে পারছেন না। গোটা নির্বাচনী এলাকা ঘুরে তাঁর কোনো ধরনের প্রচারণা দেখা যায়নি। চোখে পড়েনি ঈগল প্রতীকের কোনো পোস্টার।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, এনামুল হকের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছিলেন যশোর-৪ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা। রিটার্নিং কর্মকর্তার এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে পৃথক আপিল করেন একই আসনে দুই প্রার্থী সুকৃতি কুমার মণ্ডল ও রণজিত কুমার রায়। আপিলে এনামুলের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগ তোলেন তাঁরা। আপিলের শুনানি শেষে ১৩ ডিসেম্বর এনামুল হকের মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে ও প্রার্থিতা ফিরে পেতে এনামুল হক ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এনামুল হক। ১৯ ডিসেম্বর এনামুল হকের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

দলীয় নেতা-কর্মীরা আরও বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রণজিত কুমার আবেদন করেছেন। আজ মঙ্গলবার এর শুনানি হওয়ার কথা আছে। শুনানিতে আদালত কী সিদ্ধান্ত দেন, সেই অপেক্ষায় আছেন রণজিৎ কুমার রায়। এ বিষয়ে রণজিৎ কুমার রায়ের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।