১০ টাকার বীজ থেকে সাফল্য, বিষমুক্ত বাঙ্গিতে আবদুস সাত্তারের ঘুরে দাঁড়ানো

সফল বাঙ্গিচাষি আবদুস সাত্তার। সম্প্রতি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের ঐচারচর গ্রামেছবি : আবদুর রহমান ঢালী

কৃষক আবদুস সাত্তার (৫০) জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিষমুক্ত আগাম বাঙ্গি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। চাষের এই পদ্ধতির মাধ্যমে তিনি শুধু নিজের ভাগ্যই বদলাননি, আশপাশের কৃষকদের মধ্যেও আশা তৈরি করেছেন।

কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের ঐচারচর গ্রামে আবদুস সাত্তারের বাড়ি। চলতি বছরের প্রথম ধাপে তিনি নিজের ১৫ শতক জমিতে আগাম জাতের বাঙ্গি চাষ করেন; খরচ হয় প্রায় ২ হাজার ৫০০ টাকা। এই জমি থেকে ইতিমধ্যে তিনি ৬০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় ১০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। একই সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপে আরও ১৫ শতক জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। সেখান থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বাঙ্গি সংগ্রহ করা যাবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাঙ্গিখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত আবদুস সাত্তার। সবুজ পাতার মধ্যে কাঁচা-পাকা বাঙ্গি। খেত থেকে বাঙ্গি সংগ্রহ করে বাজারে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন আবদুস সাত্তার। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে বাজারে গিয়ে বাঙ্গি বিক্রি করেন তিনি। তাঁর বাঙ্গি স্বাদে–গন্ধে অতুলনীয়। পথেই বিক্রি হয়ে যায়। আবার মাঝেমধ্যে পাইকারি বিক্রেতারা খেতে এসে বাঙ্গি কিনে নিয়ে যান।

কৃষক আবদুস সাত্তার জানান, ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের প্রতিটি বাঙ্গির দাম ২০০ টাকা, ৭ থেকে ৮ কেজি ওজনের বাঙ্গির দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। ১০ কেজি ওজনের বাঙ্গি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় খুচরা বিক্রি হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতিটি বাঙ্গির খুচরামূল্য থেকে ৫০ টাকা করে কম দামে বিক্রি করা হয়। বাঙ্গির জাত লম্বা হওয়ায় ওজন অনেক বেশি হয়।

একই গ্রামের কৃষক রাজিব মিয়া বলেন, কৃষক আবদুস সাত্তারের দেখাদেখি গ্রামের অন্য কৃষকেরাও বাঙ্গি চাষ করছেন। গ্রামের দুই সহোদর মহসীন হোসেন ও তোফাজ্জল হোসেন আবদুস সাত্তারের দেখাদেখি বাঙ্গি চাষ করে তিন বছর ধরে বেশ লাভবান হচ্ছেন।

খেত থেকে বাঙ্গি সংগ্রহ করে বাজারে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আবদুস সাত্তার। সম্প্রতি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের ঐচারচর গ্রামে
ছবি: আবদুর রহমান ঢালী

আবদুস সাত্তার জানান, ছোটবেলা থেকে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করতেন তিনি। জীবিকার তাগিদে ২৫ বছর বয়সে সৌদি আরবে যান। ১০ বছর পর ২০১১ সালে দেশে ফিরে বাবাকে হারান। পরে একটি গরুর খামার করলেও রোগে গরু মারা যাওয়ায় প্রায় ২০ লাখ টাকার ঋণে পড়েন। সেই সংকটকালে ১০ টাকা দিয়ে কেনা এক প্যাকেট বাঙ্গির বীজ তাঁকে নতুন পথ দেখায়। ৭ শতক জমিতে বাঙ্গি চাষ করে ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করেন। তিনি বলেন, তিনি জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ফসল আবাদ করেন। এ ব্যাপারে তিনি একাধিকবার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁর আবাদ করা সব ফসলই বিষমুক্ত এবং স্বাদে–গন্ধে অতুলনীয়। তবে বাঙ্গি চাষ করে তিনি সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন।

কৃষিকাজে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ ও ২০২৩ সালে আবদুস সাত্তার জেলার শ্রেষ্ঠ কৃষকের পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর সাফল্যের পেছনে সার্বক্ষণিক সহায়তা করছেন স্ত্রী নার্গিস আক্তার।

তিতাস উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ বলেন, আবদুস সাত্তার কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ফসল আবাদ করেন। তিনি টানা ১০ বছর ধরে লাভবান হচ্ছেন। এর মধ্যে বাঙ্গি আবাদ করে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন। গোবর সার ব্যবহার করে বাঙ্গি আবাদ করায় আবদুস সাত্তারের বাঙ্গি স্বাদে–গন্ধে অতুলনীয়।