লাকসামে বগিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মারধর, ট্রেন অবরোধ

ট্রেন
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সোনারবাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে অন্তত ১০ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে জংশনে অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় এ ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা লাকসাম জংশনে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। রাত ৯টা ১৫ মিনিটে শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের ধ বগির যাত্রী প্রত্যক্ষদর্শী ইকরাম হোসেন বলেন, ধ বগিতে ৮১০ টাকা দিয়ে ‘লাল টিকিট’ কিনে ট্রেনে ওঠেন রাজশাহীর তিন শিক্ষার্থী—হৃদয় চক্রবর্তী, মো. আল লতিফুর রহমান, মেহেরাজ হোসেন। ট্রেনে ওঠার পর টিটি তাঁদের কাছে টিকিট চান। এরপর শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাছে থাকা লাল টিকিট (কাউন্টারে টিকিট না পাওয়ায় ট্রেনে ওঠার পর তাৎক্ষণিকভাবে কেনা টিকিট) তাঁকে দেখান। কিন্তু টিটি আরও টাকা দাবি করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁদের কাছে আর কোনো টাকা নেই।

এরপর টিটি ট্রেনে থাকা আনসার সদস্যদের ডেকে আনেন। আনসার সদস্যরা ওই শিক্ষার্থীদের টেনেহিঁচড়ে একটি বগিতে নিয়ে যান। একপর্যায়ে ট্রেনটি লাকসাম জংশনে সন্ধ্যা সাতটায় যাত্রাবিরতি করে। তখন ওই শিক্ষার্থীদের ট্রেন থেকে নামানো হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ট্রেনের সামনে শুয়ে পড়েন। তাঁরা এ সময় তাঁদের সঙ্গে হওয়া অশোভনীয় আচরণের বিচার দাবি করেন। মুঠোফোনে একই সময়ে বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীরা তাঁদের নাজেহালের তথ্য জানান। পরে বিভিন্ন বগিতে থাকা শিক্ষার্থীরা তাঁদের সঙ্গে এসে যোগ দেন।

শিক্ষার্থী হৃদয় চক্রবর্তী বলেন, ‘টিকিট কেটে ট্রেনে উঠি। এরপরও টিটি বাড়তি টাকা চান। টাকা না দেওয়াতে আমাদের নাজেহাল করা হয়। আমার হাতে ও গলায় আঘাত করা হয়েছে। আমিনুল ইসলাম নামের রেলওয়ের এক কর্মকর্তা খারাপ আচরণ ও আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ ছাড়া অন্যান্য বগিতেও আমাদের সাত শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে।’

তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, চট্রগ্রাম থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী বিনা টিকিটে ট্রেনে ওঠেন। ট্রেনে ওঠার পর ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটি) শিক্ষার্থীদের কাছে টিকিট চান। একই সঙ্গে অতিরিক্ত টাকা জরিমানা করেন। শিক্ষার্থীরা এতে ক্ষুদ্ধ হন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থী ও টিটির মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এ সময় হাতাহাতির ঘটনা ঘটে দুই পক্ষের মধ্যে। পরে লাকসাম স্টেশনে অন্তত ১০ শিক্ষার্থীকে নামানো হয়। তখন শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন। একই সঙ্গে ট্রেন আটকে রাখেন। রাত সোয়া নয়টায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

স্টেশনমাস্টার শাহাবুদ্দিন জানান, ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা শিক্ষার্থীদের ভাড়া আদায় করতে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় তাঁরা ট্রেনটি আটকে দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে আছেন লাকসাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহিতুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা মতিন, লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন, রেলওয়ে থানার ওসি জসিম উদ্দিন।
লাকসামের ইউএনও মাহফুজা মতিন বলেন, আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রাত নয়টার পর ট্রেনটি লাকসাম জংশন ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশে যায়।