মামলা করবেন না শিশু সাজিদের বাবা, গর্ত খোঁড়া ব্যক্তি আত্মগোপনে

রাজশাহীর তানোরে গর্তে পড়ে যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের অভিযান। বৃহস্পতিবার উপজেলার কোয়েলহাট পূর্ব পাড়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর তানোরে গভীর নলকূপের পরিত্যক্ত গর্তে পড়ে মারা যাওয়া শিশু সাজিদের বাবা ছেলের লাশ উদ্ধারের পর অভিযোগ করেছিলেন, এটি অবহেলাজনিত মৃত্যু। তিনি বিচার চান। তবে এখন তিনি মামলা করতে চাচ্ছেন না। এদিকে যিনি গর্তটি খুঁড়েছিলেন, সেই কছির উদ্দিন ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে আছেন। উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন না নিয়েই অবৈধভাবে তিনি ওই গর্ত খুঁড়েছিলেন।

গত বুধবার দুপুরে উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামের কছির উদ্দিনের জমিতে থাকা গভীর নলকূপের পরিত্যক্ত গর্তে পড়ে যায় শিশু সাজিদ। ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ৩২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর বৃহস্পতিবার রাতে মাটির ৫০ ফুট নিচ থেকে সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাজিদ (২) ওই গ্রামের রাকিবুল ইসলামের ছেলে।

শনিবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করলে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে মামলা করব না। আমাদের সবার কথা যে আল্লাহর মাল আল্লাহই নিয়েছে।’ সাজিদের মৃত্যুর পর কছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তুলে বিচার চেয়েছিলেন—স্মরণ করালে রাকিবুল বলেন, ‘ঠিক আছে ভাই। এ কথা বলার মানে, এই কথা থেকে যেন গোটা দেশ সতর্ক থাকে। এই ভুলটা যেন আর কেউ না করে। আমার বাচ্চাটা যেভাবে গেছে ভাই, সবাই যদি একটু আগে থেকে সচেতন হয়; তাহলে ইনশা আল্লাহ এই ক্ষতিটা হবে না। আমার দ্বারা যাতে আর দশজনে শিক্ষাটা পায়।’

মামলা না করতে কোনো চাপ আছে কি না, জানতে চাইলে রাকিবুল বলেন, ‘আমার ওপর কোনো চাপ নাই। কারণ গোটা দেশ আমাদের পক্ষে আছে। ইনশা আল্লাহ পুলিশ প্রশাসন সবাই আমাদের পক্ষে আছে। কোনো চাপ নাই।’ কছির উদ্দিন কিছু বলেছে কি না, প্রশ্ন করলে বলেন, ‘না ভাই। উনি এখনো আসে নাই। ওনার সঙ্গে আমি এখনো যোগাযোগ পাই নাই। উনি আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি।’

আরও পড়ুন
রাজশাহীর তানোরে গর্তে পড়ে নিহত শিশু সাজিদের জানাজায় অংশ নেন এলাকার লোকজন। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার কোয়েলহাট গ্রামে
ছবি : শফিকুল ইসলাম

কছির উদ্দিন স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর কর্মী। তাঁর ভাই আব্দুল করিম স্থানীয় ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক আমির। এখন জামায়াতের টিম সদস্য। এটি সম্মানীয় পদ। কছির উদ্দিন আগে বিদেশে ছিলেন। দেশে ফেরার পর পানির ব্যবসা শুরু করেন। এলাকায় বসিয়েছেন পাঁচটি অগভীর নলকূপ। অবৈধভাবে অন্য নামে বিদ্যুৎ–সংযোগ নিয়ে এসব নলকূপ চালান তিনি।

বছরখানেক আগে উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন ছাড়াই আরও একটি নলকূপ বসাতে বোরিং (গর্ত) করেন কছির উদ্দিন। তবে মাটির ৯০ ফুট গভীরে যাওয়ার পর সেখান থেকে পাথর উঠতে থাকে। এ জন্য পরপর তিনটি স্থান বোরিং করান। তারপরও পানির সন্ধান পাওয়া যায়নি। সেই পরিত্যক্ত গর্তে পড়ে শিশু সাজিদের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন

তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সেচ কমিটির সভাপতি নাঈমা খান বলেন, কছির উদ্দিনের অবহেলার কারণে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগীর পরিবার যেভাবে চাইবে, সেভাবে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আগে থেকেই কছির উদ্দিনের কয়েকটি সেচপাম্প আছে বলে শুনেছেন। সেগুলো বৈধ কি না যাচাই করতে হবে। তবে যে সেচপাম্পের গর্তে পড়ে সাজিদের মৃত্যু হয়েছে, সেটির জন্য কছির উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন নেননি। তিনি বেআইনি কাজ করেছিলেন।

এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সবকিছুই দেখছি। ব্যবস্থা হবে।’ অভিযুক্ত কছির উদ্দিন গত বুধবার থেকেই আত্মগোপনে। তাই তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন