টেলিফোন সংযোগ অচল, তবুও দিতে হচ্ছে বিল 

জেলার টেলিফোন–সংযোগের ক্ষমতা রয়েছে ৪ হাজার ৩১টি। কিন্তু মোট সংযোগ রয়েছে ১ হাজার ৭২৬টি। 

প্রতীকী ছবি

নেত্রকোনার কলমাকান্দা, খালিয়াজুরি, মদন, দুর্গাপুর উপজেলায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) সেবা পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। তবে প্রতি মাসে তাঁদের টেলিফোনের (ল্যান্ডফোন) বিল গুনতে হচ্ছে। গ্রাহকেরা বলেন, ব্যবহার না করতে করতে তাঁরা তাঁদের টেলিফোনের নম্বরটি ভুলতে বসেছেন। অথচ মাস শেষে বিল ঠিকই গুনতে হচ্ছে।

সোনালী ব্যাংক আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রিন্সিপাল কর্মকর্তা নিরাময় সরকার বলেন, আট বছর ধরে মদন শাখা কার্যালয়ের টেলিফোন সংযোগটি অচল। অথচ প্রতি মাসে বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। লাইন সচল অথবা বিল বন্ধ করে দিতে একাধিকবার বিটিসিএল কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

নেত্রকোনা বিটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১০টি উপজেলায় টেলিফোন সংযোগের ক্ষমতা রয়েছে ৪ হাজার ৩১টি। কিন্তু বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়, আবাসিক এলাকাসহ মোট সংযোগ রয়েছে ১ হাজার ৭২৬টি। এর মধ্যে পৌর শহরে আছে সবচেয়ে বেশি সংযোগ। সেখানে ১ হাজার ৯৮৩টির মধ্যে ৯৪০টি সংযোগ রয়েছে। এ ছাড়া কলমাকান্দায় ১৯২টির সংযোগ ক্ষমতার মধ্যে ৫৮টি, দুর্গাপুরে ২৫৬টির মধ্যে ১১৪টি, কেন্দুয়া ১৯২টির মধ্যে রয়েছে ৬১টি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মদন উপজেলায় ১৯২টি সংযোগ ক্ষমতার মধ্যে ৭৭টি রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে প্রায় ৯ বছর ধরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরসহ ব্যক্তিমালিকানাধীন ৫১টি টেলিফোন–সংযোগ অকেজো রয়েছে। এসব সংযোগের মধ্যে সরকারি ২৩টি দপ্তর রয়েছে। সংযোগের জন্য নিয়মিত ১৭৩ টাকা করে গড় বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। গ্রাহকেরা বিষয়টি নিয়ে বিটিসিএলের উপজেলা কার্যালয়ে যোগাযোগ করে কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না।

কলমাকান্দা উপজেলা প্রকৌশলী শুভ্রদেব চক্রবর্তী বলেন, ‘কার্যালয়ে টেলিফোন আছে, সে কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আপনি মনে করিয়ে দিলেন। আমি প্রায় দুই বছর ধরে এখানে আছি। একদিনও ফোনে কথা বলতে পারলাম না। সব কাজ মোবাইলেই করা হয়। তাই টেলিফোন সেটটি কার্যালয়ের ড্রয়ারে রেখে দেওয়া হয়েছে। টেলিফোন নম্বরটিও ভুলে গেছি।’

নেত্রকোনা শহরের সাতপাই এলাকার বাসিন্দা ভজন দাশ বলেন, তাঁর বাড়িতে টেলিফোন আছে কিন্তু ব্যবহার করা হয় না। আর গত ছয় মাস এটি অকেজো। তবে কয়েক মাস পরপর বিলের কাগজ দিয়ে যায়। এখন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য যোগাযোগ করছেন।

নেত্রকোনা টেলিফোন ভবনের অফিস সহকারী শেখ আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলার অনেক সংযোগই অচল। অনেকে টেলিফোন ব্যবহারও করেন না, বিলও রাখতে চান না। তাঁরা আবার সংযোগ বিচ্ছিন্নও করেন না। কোনো গ্রাহক যদি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চান, তাহলে সব বকেয়া পরিশোধ করে রাজস্ব থেকে দায়মুক্তি পত্র নেবেন। এরপর সহকারী ব্যবস্থাপক বরাবর আবেদন করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তাঁর কাছে আর বিল যাবে না। নয়তো সরকারি হিসাবে প্রতি মাসে টেলিফোনের জন্য ১৭৩ টাকা বিল পরিশোধ করতে হবে।

বিটিসিএলের জেলা জুনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, জেলায় বেশির ভাগ উপজেলাতেই এক্সচেঞ্জগুলো পুরোনো হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ টেলিফোন–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। আর তাঁদের লোকবলের সংকট। মাত্র ১৬ জন কর্মী আছেন। নতুন এক্সচেঞ্জ স্থাপনের কাজ চলছে। আশা করা যাচ্ছে, তিন চার মাসের মধ্যেই নতুন প্রকল্প জি ফোন চালু করা সম্ভব হবে।