চিকিৎসকদের স্বার্থ সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিল বিএমএর বাহার-তুষার পরিষদ

২১ সেপ্টেম্বর হতে যাচ্ছে চিকিৎসকদের সংগঠন–বিএমএর নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক শেখ বাহারুল আলম ও আব্দুন নূর তুষার খুলনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন। শনিবার খুলনার বিএমএ ভবনে
ছবি: প্রথম আলো

বর্তমানে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে সংগঠনটি চিকিৎসকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো দাবি বাস্তবায়ন করেনি। এ ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপমুক্ত চিকিৎসাব্যবস্থা গড়তে ও চিকিৎসকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিলেন চিকিৎসক শেখ বাহারুল আলম ও আব্দুন নূর তুষার।

আজ শনিবার দুপুরে খুলনা বিএমএ ভবনের কাজী আজহারুল হক মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এসব প্রতিশ্রুতি দেন। সংবাদ সম্মেলনে খুলনা, নড়াইল ও যশোরের কয়েকজন বিএমএ নেতা উপস্থিত ছিলেন। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর বিএমএর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে খুলনা জেলা বিএমএর সভাপতি শেখ বাহারুল আলম বলেন, তিন বছর পরপর বিএমএ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু গত সাত বছরে কোনো নির্বাচন হয়নি। ওই সময়ের মধ্যে পেশাজীবীদের ওই সংগঠনটিকে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত করেছেন বর্তমান নেতারা। চিকিৎসকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো দাবি পূরণ করা হয়নি। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রতিনিধিত্বশীল জাতীয় সংগঠন হয়েও বিএমএ আজ দুর্বল। অথচ এটা হওয়ার কথা ছিল না। বর্তমানে বিএমএ এখন আর চিকিৎসকদের হয়ে কথা বলতে পারছে না।

বর্তমান স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঔপনিবেশিকতার ধারাবাহিকতায় লালফিতায় আটকানো উল্লেখ করে বাহারুল আলম বলেন, চিকিৎসা দেওয়া ও পাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও রোগীর অধিকারের কোনো বাস্তবায়ন নেই। হেলথ সার্ভিসে চিকিৎসকদের সঙ্গে কর্মীর মতো আচরণ করা হয়। রোগীর মৃত্যুতে স্বজনেরা বিনা অপরাধে চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করছেন। সুনির্দিষ্ট আইন থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য এগিয়ে না এসে হেলথ সার্ভিস চুপ থাকছে। চাকরি, উচ্চশিক্ষা ও পদায়নের পদে পদে বৈষম্য রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থাপনার জন্য চিকিৎসকেরা দায়ী নন। হেলথ সার্ভিসের ত্রুটি ও ঘাটতি দায়ী।

বাহারুল আরও বলেন, হাসপাতালে বা চিকিৎসাকেন্দ্রের জন্য কোটি কোটি টাকার যন্ত্র কেনা হয়। কিন্তু চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয় না। ফলে জনবলহীন যন্ত্রপাতি পড়ে নষ্ট হয় আর দায় চাপানো হয় চিকিৎসকদের ওপর। ক্রয়–বাণিজ্যের নামে এ রকম দুর্নীতি হরহামেশাই হচ্ছে। চিকিৎসক ও চিকিৎসার পরিবেশ ভালো রাখতে সরকারের কাছে তিনি কিছু দাবি তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান ২১ সেপ্টেম্বর নির্বাচনে ভোট দিয়ে তাঁরা যেন শক্তিশালী বিএমএ গঠন করতে এগিয়ে আসেন। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা ও বেসরকারি পোস্টগ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের ৫০ হাজার টাকা করার দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুন নূর তুষার বলেন, ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে বিএমএতে খুব বেশি নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়েছে এমন নয়। ধারাবাহিকভাবে ঘুরেফিরে গুটিকয় লোকই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অন্য নেতা হয়েছেন। অনেক দিন নতুন নেতৃত্বের উত্থান দেখেনি বিএমএ। বর্তমানে যাঁরা নেতৃত্বে আছেন, তাঁরা চিকিৎসকদের জন্য কোনো ভালো প্রতিশ্রুতি দিয়ে নেতা হয়েছেন এমন নয়। তাঁরা মূলত তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় ও বিএমএর মধ্যে থাকা রাজনৈতিক উপদলভিত্তিক নির্বাচন করেছেন। এ কারণে বিএমএ ধীরে ধীরে অকার্যকর সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এই অকার্যকর সংগঠনটিকে চিকিৎসকদের ‘দাবি পূরণের সংগঠনে’ পরিণত করতে এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা।