কেরানীগঞ্জে রাসায়নিক গুদামে বিস্ফোরণে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি

রাসায়নিক গুদামে বিস্ফোরণে লণ্ডভণ্ড বসতঘর। আজ মঙ্গলবার সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন কালিন্দী গদারবাগ এলাকায় আবুল হাসনাতের বাড়িতে
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার কেরানীগঞ্জের কালিন্দী গদারবাগে আবাসিক এলাকায় থাকা রাসায়নিকের গুদামে বিস্ফোরণে চারজন নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বিস্ফোরণে নিহত পরিবারের প্রত্যেককে ২৫ হাজার ও আহতদের ১৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থসহায়তা প্রদান করেন।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে কেরানীগঞ্জের কালিন্দী গদারবাগ এলাকায় হাজী আবুল হাসনাতের মালিকানাধীন বাড়িতে স্বাদ গ্লাস অ্যান্ড পলিমার কারখানার রাসায়নিক গুদামঘরে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ঘুমন্ত শিশুসহ চারজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন আরও তিনজন। তাঁদের উদ্ধার করে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

নিহতরা হলেন কালিন্দী গদারবাগ এলাকার বাসিন্দা সৌদিপ্রবাসী মিলন মিয়ার স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৩২) ও তাঁর মেয়ে ইশা আক্তার (১৪) এবং সোহাগ মিয়ার স্ত্রী মিনা আক্তার (২০) ও তাঁর দেড় বছর বয়সী মেয়ে তাইয়েবা আক্তার। আহতরা হলেন সোহাগ মিয়া (৩০) ও তাঁর মেয়ে তানহা আক্তার (৪) ও সোহাগের মা পারুল বেগম (৪৮)।

এদিকে আজ বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক, দাহ্য পদার্থ ও প্লাস্টিকের কারখানা ও গুদামঘর গড়ে তোলা যাবে না। এ বিষয়ে হাইকোর্ট ও সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও কিছু কিছু অতি লোভী সম্পত্তির মালিক ও ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে আবাসিক এলাকায় কারখানা ও গুদামঘর পরিচালনা করে থাকেন। এটা অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে আবাসিক এলাকায় যত্রতত্র যেসব রাসায়নিক, দাহ্য পদার্থ ও প্লাস্টিক কারখানা ও গুদামঘর রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ভোর ছয়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে
ছবি: প্রথম আলো

গদাবাগ এলাকার বাসিন্দা আলী আহমেদ বলেন, তাঁর ভাগনে সোহাগ রাসায়নিক গুদামঘরের মালিকের দোকানে কাজ করতেন। এখানে তাঁর মালিকের বাড়িতে থাকতেন। বিস্ফোরণে পুরো পরিবারটি এলোমেলো হয়ে গেল। নিষ্পাপ শিশুরাও রক্ষা পেল না।  

অপর বাসিন্দা মো. স্বাধীন বলেন, রাসায়নিক গুদামঘরটি কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থাও ছিল না। গোপনীয়ভাবে এখানে গুদামঘরটি পরিচালনা করা হতো।

খোরশেদ আলম বলেন, এখানে রাতের আঁধারে গোডাউনের মালামাল আনা–নেওয়া করা হতো। এটা রাসায়নিকের গুদাম জানলে তাঁরা বাধা দিতেন। তিনি আরও বলেন, এ এলাকার সড়কের গলির অবস্থা খুবই খারাপ। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার মতো প্রয়োজনীয় জায়গা নেই। তাই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক (এজিএম) মো. শামসুজ্জামান বলেন, রাসায়নিক গুদামঘরে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে প্রথমে কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এবং পরে সদরঘাট ফায়ার সার্ভিস ও ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর থেকে প্রায় ছয়টি ইউনিট দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ভোর ছয়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যায়নি। তদন্তের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।