বাড়ির ছাদে রেখে আসা গরুর জন্য মন কাঁদে বিবি খতিজার
মাথায় কাপড় টেনে আশ্রয়কেন্দ্রের এক কোণে বসে আছেন ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা। চোখেমুখে তাঁর রাজ্যের হতাশা। কাছে গিয়ে জানতে চাইলেই চোখ ছলছল করে ওঠে তাঁর। তিনি জানালেন, তাঁর নাম বিবি খতিজা। বাড়ি ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের পশ্চিম রাজানগর গ্রামে।
জীবন বাঁচাতে গত বৃহস্পতিবার এক ছেলে, পুত্রবধূ ও এক নাতনিকে নিয়ে এসেছেন মিরসরাইয়ে। আশ্রয় নিয়েছেন মিরসরাই সরকারি উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে। তাঁর সঙ্গে একই গ্রামের আরও ২২ জন আশ্রয় নিয়েছেন এ কেন্দ্রে।
মিরসরাই সরকার উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে আজ শনিবার বিকেল পাঁচটায় বিবি খতিজার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে তাঁর স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা নাছির আহমেদ ভূঁইয়া মারা যান। দুই ছেলের মধ্যে একজন প্রবাসী আরেকজন বাড়ি থাকেন। পুত্রবধূ আর নাতি-নাতনিদের নিয়ে বেশ সুখের সংসার তাঁর। একজন ধনী গৃহস্থের ঘরে যা যা থাকে তার সবকিছু ছিল তাঁর ঘরে। কিন্তু মুহূর্তেই বন্যার পানি সব তছনছ করে দিয়ে গেছে। জীবন বাঁচাতে এখন সে ঘরও ছাড়তে হয়েছে।
দীর্ঘদিনেও এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেননি উল্লেখ করে বিবি খতিজা বলেন, ‘আমরা তিন কুড়ি বছর বয়সে এমন ঢল দেখিনি কখনো। কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছিল। এমন বৃষ্টি মাঝেমাঝেই হয়, তাই এ নিয়ে খুব একটা চিন্তা ছিল না। কিন্তু বুধবার রাত থেকে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ঘোলা পানির তীব্র স্রোত আঘাত হানতে থাকে ঘরের দেয়ালে। রাত পার হতেই ঘরের ভেতর এক একবুক পানি উঠে যায়। পানির এমন স্রোত যে ঘরের জিনিস বাঁচাব, না নিজেদের প্রাণ বাঁচাব, তা বুঝতে পারছিলাম না। বুধবার রাতেই বাড়ির ছাদে উঠে যাই সবাই। সঙ্গে ছিল দুটি গরু। টানা বৃষ্টিতে ভিজে ছাদে যখন আর থাকা সম্ভব হচ্ছিল না, তখন বাড়ির পাশের রাস্তায় মাথা পর্যন্ত পানি। ক্রমেই পানি বাড়তে থাকলে বাড়ির আরও সদস্যদের নিয়ে একটি নৌকায় করে মিরসরাই উপজেলায় চলে আসি।’
বিবি খতিজা আরও বলেন, ‘আমরা আসতে পারলেও পালা গরু দুটি আর সঙ্গে আনতে পারিনি। একদিন নৌকা নিয়ে আমার ছেলে বাড়ি গিয়ে গরুগুলোকে সামান্য চালের কুড়া খাইয়ে চলে আসে। কোথাও কোনো ঘাস নেই যে গুরুগুলোকে একটু খেতে দেবে। না খেয়ে গরুগুলো কী করে বেঁচে থাকবে। এখন এখানে খেতে বসলে গরুগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। বাড়ির ছাদে রেখে আসা গরু দুটির জন্য মন কাঁদে খুব।’