শেরপুরে দুই শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় দুই সংসদ সদস্যসহ আসামি চার শতাধিক
শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দুটি পৃথক হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় শেরপুরের সাবেক দুই সংসদ সদস্য ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ চার শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত এই দুই শিক্ষার্থী হলেন শেরপুর সদরের পাকুরিয়া ইউনিয়নের তারাগড় কান্দাপাড়া গ্রামের মো. মিরাজ আলীর ছেলে মাহবুব আলম (১৯) এবং শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়াকাজিরচর ইউনিয়নের পূর্ব রূপারপাড়া গ্রামের মো. আজাহার আলীর ছেলে সবুজ মিয়া (১৯)। মাহবুব শেরপুর সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আর সবুজ শ্রীবরদী সরকারি কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। ৪ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে প্রশাসনের গাড়িচাপায় মাহবুব নিহত হন। সবুজ নিহত হন গুলিবিদ্ধ হয়ে।
নিহত মাহবুবের মা মাফুজা খাতুন ও সবুজের বড় ভাই মো. সাদ্দাম হোসেন বাদী হয়ে ১২ আগস্ট শেরপুর সদর থানায় হত্যা মামলা দুটি করেন। উভয় মামলায় শেরপুর-১ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. ছানুয়ার হোসেন, শেরপুর-১ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ ডি এম শহিদুল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর রুমান, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল আলিম, সুজন মিয়া, সুব্রত কুমার দে, কানু চন্দ্র চন্দ, দেবাশীষ ভট্টাচার্য, মিনালসহ ২৫ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মামলা দুটিতে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মামলা দুটির বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। তবে মামলার কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি বলে তিনি জানান।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৪ আগস্ট বিকেলে শিক্ষার্থীদের মিছিলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ধাওয়া দেন ও গুলি ছোড়েন। এ সময় শেরপুর শহরের খরমপুর এলাকায় প্রশাসনের দ্রুতগতির গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে কলেজশিক্ষার্থী মাহবুব আলম নিহত হন। অপর দিকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী সবুজ মিয়া প্রাণ হারান। তখনকার পরিস্থিতিতে নিহত দুই শিক্ষার্থীকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিজ নিজ এলাকার কবরস্থানে দাফন করা হয়। মামলার বাদীপক্ষ এ ঘটনার জন্য দায়ী আসামিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আবেদন জানান। ৪ আগস্ট আন্দোলন চলাকালে প্রশাসনের গাড়িচাপায় শারদুল আশিস সৌরভ নামে আরেক কলেজশিক্ষার্থী নিহত হন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এজাহারনামীয় সব আসামি পলাতক থাকায় অভিযোগের ব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি মো. মাহমুদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মো. হযরত আলী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শেরপুর জেলা শাখার নেতা-কর্মীরা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা পৃথক পৃথক সমাবেশে শিক্ষার্থী হত্যায় জড়িত সব আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।