মেঘনা ও নাঙ্গলকোটে আওয়ামী লীগের লড়াই বিএনপির বহিষ্কৃত দুই প্রার্থীর সঙ্গে

ভোটারদের ভাষ্য, দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক প্রার্থী থাকায় বিএনপির প্রার্থীরা নানা সমীকরণে এগিয়ে আছেন।

নির্বাচন কমিশনফাইল ছবি

কুমিল্লার মেঘনা ও নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাদের লড়াই হবে। দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই বা ততোধিক নেতা প্রার্থী হওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির প্রার্থীরা নানা সমীকরণে এগিয়ে আছেন বলে ভোটাররা মনে করছেন।

আজ সোমবার মধ্যরাতে প্রচারণা শেষ হচ্ছে। বুধবার প্রথম ধাপে এই দুই উপজেলায় ভোট। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। কোনো অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেঘনা

মেঘনা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন পাঁচজন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা চারজন। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. তাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. সাইফুল্লাহ মিয়া ওরফে রতন শিকদার এবং কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সালাম। এ ছাড়া মেঘনা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) রমিজ উদ্দিন প্রার্থী হয়েছেন।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চার প্রার্থীর কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে, কেউ দলীয় প্রতীক নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন। এতে করে দলীয় নেতা–কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। উপজেলা নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে। এ অবস্থায় সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত রমিজ উদ্দিন।

রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী চারজন। আমি বিএনপির একলা প্রার্থী। এই উপজেলায় বিএনপির ভোট বেশি। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরিবেশ আছে বলেই প্রার্থী হয়েছি। দল বহিষ্কার করলেও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন।’

নাসির উদ্দিন নতুন চেয়ারম্যান প্রার্থী। অপর চার প্রার্থী এর আগেও একাধিকবার নির্বাচন করেছেন। নাসির উদ্দিনের দাবি, সুষ্ঠু ভোট হলে তিনি জিতবেন। এলাকার লোকজন তাঁর পক্ষে আছেন বলে মনে করেন নাসির।

মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল আলম বলেন, দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন হচ্ছে না। নেতা–কর্মীরা আওয়ামী লীগের চার প্রার্থীর সঙ্গেই আছেন। এখানে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থীকেই ভোটাররা বেছে নেবেন।

নাঙ্গলকোট

নাঙ্গলকোটে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী তিনজন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দুজন। তাঁরা হলেন নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইউসুফ ভূঁইয়া এবং ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাছান ওরফে বাছির ভূঁইয়া। অপর প্রার্থী হলেন বিএনপি নেতা (বহিষ্কৃত) ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম। তিনি উপজেলার মক্রবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নাঙ্গলকোটে আওয়ামী লীগের দুটি ধারা। এক পক্ষে আছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন (কালু), মেয়র আবদুল মালেক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামালের ব্যক্তিগত সহকারী কে এম সিংহ রতন। গত শুক্রবার বিকেলে তাঁরা উপজেলার দায়েমছাতি উচ্চবিদ্যালয়ে জনসভা করেন। তাঁরা সরাসরি মাঠে কাজ করছেন ইউসুফ ভূঁইয়ার জন্য। ইউসুফ বলেন, নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগ তাঁর পক্ষে এককাট্টা। দলের সব নেতা–কর্মী তাঁর পক্ষে কাজ করছেন।  

আওয়ামী লীগের আরেকটি পক্ষে আছেন অধ্যক্ষ মো. ইউসুফসহ দলের তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা। তাঁরা কাজ করছেন নাজমুল হাছানের পক্ষে। এই প্রার্থীর ভাষ্য, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি জিতবেন। তৃণমূলের সব নেতা–কর্মী তাঁর সঙ্গে আছেন।

তবে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম এগিয়ে থাকবেন। কারণ, উপজেলা বিএনপির অনেক নেতা–কর্মী মাজহারুলের পক্ষে মাঠে তত্পর।

মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হলে নাঙ্গলকোটে ভোটবিপ্লব হবে। এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এই নির্বাচনে ভোটাররা ভালো প্রার্থীকে ভোট দেবে। নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা সুষ্ঠু ভোট করলে আমি জিতব। আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর কারণে আমার জয় নিশ্চিত হবে।’