বেড়ায় টিসিবির পণ্য পেতে সাত ঘণ্টা অপেক্ষার পরও ফিরে গেলেন অনেকে

টিসিবির পণ্য পেতে কাঠফাটা রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কার্ডধারী নিম্নআয়ের মানুষেরা। রোববার বেড়া পৌর এলাকার দত্তকান্দি মহল্লায়ছবি: প্রথম আলো

‘কম দামে ত্যাল, চিনি আর ডাইল কেনার আশায় ফজরের নামাজের পর লাইনে আইস্যা দাঁড়াইছি। এখন আর পারত্যাছি না। সামনে যত্তো বড় লাইন, আরও দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যে কেনার সুযোগ পামু কি না সন্দেহ।’

কথাগুলো বলছিলেন পাবনার বেড়া পৌর এলাকায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য কিনতে লাইন দাঁড়ানো ষাটোর্ধ্ব নারী মহিতন খাতুন।

আজ রোববার ভোর পাঁচটার দিকে দত্তকান্দি মহল্লার বিক্রয়কেন্দ্রের লাইনে দাঁড়ান মহিতন খাতুন। তিনি সেখানে যাওয়ার আগেই আরও অনেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ওই কেন্দ্রে পণ্য বিক্রি শুরু হয় সকাল আটটায়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দত্তকান্দি মহল্লায় গিয়ে দেখা যায়, তীব্র দাবদাহের মধ্যে তখনো লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন মহিতন খাতুন। তাঁর সামনে আরও শতাধিক মানুষের লাইন। প্রায় সাত ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন এই বয়স্ক নারী।

আজ বেড়া পৌর এলাকায় টিসিবির পণ্য কিনতে আসা অনেকেই প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপরও অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন খালি হাতে ফিরে যান।

টিসিবির কার্ডধারীরা বলেন, লাইন থেকে এক কেজি চিনি, দুই কেজি মসুর ডাল ও দুই লিটার সয়াবিন তেল ৪২০ টাকায় কিনতে পারেন তাঁরা। খোলাবাজারে এগুলোর দাম প্রায় ৭০০ টাকা।

টিসিবির দাত্বিপ্রাপ্ত ডিলার হৃদয় কুমার বলেন, ‘পণ্য সরবরাহ ও বিক্রির জন্য বেশি লোক এনেছিলাম। কিন্তু একসঙ্গে পণ্য কিনতে বেশি মানুষ আসায় এবং চিনি ও ডাল আগে থেকে প্যাকেট না করার কারণে সমস্যা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যা যাতে না হয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখব।’ তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত এক হাজার তিন শ জনের জন্য পণ্য আনা হলেও শেষ পর্যন্ত ২০ থেকে ৩০ জন পণ্য পাননি। অতিরিক্ত কার্ড বিতরণের কারণে এমনটি হয়েছে।

রোববার ভোর পাঁচটা থেকে অনেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন টিসিবির পণ্যের জন্য
ছবি: প্রথম আলো

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহা. সবুর আলী বলেন, ‘ডিলারের গাফিলতিতে লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটলে তাঁর ডিলারশিপ বাতিল করা হবে। অতিরিক্ত কার্ড বিতরণ করার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

পণ্য না পেয়ে ফিরে যাওয়া একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, কার্ড বিতরণের দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা তাঁদের কর্মী–সমর্থক ও পছন্দের লোকজনকে অতিরিক্ত কার্ড দিয়েছেন। কোনো কোনো পরিবারের একাধিক সদস্যকেও কার্ড দেওয়া হয়েছে।

ডিলারের অদক্ষতা ও গাফিলতিতে পণ্য পেতে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে অভিযোগ করে তাঁরা বলেন, পৌর এলাকার ৭, ৮ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ১ হাজার ২৯৬ জন কার্ডধারী রয়েছে। আজ দত্তকান্দি বিক্রয়কেন্দ্রে মাত্র দুই থেকে তিনজন লোক দিয়ে তাঁদের মধ্যে পণ্য বিক্রি করা হয়। সুশৃঙ্খল লাইনের জন্য বাঁশের বেড়া দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। ফলে অনেক আগে এসে লাইনে দাঁড়ানো লোকজনও বিশৃঙ্খলার কারণে পেছনে পড়ে যান।

উপজেলা প্রশাসনের তদারককারী কর্মকর্তা ও ডিলাররা জানিয়েছেন, পৌর এলাকার ৪ হাজার ৯৮ জনের নামে টিসিবির কার্ড বিতরণ করার কথা থাকলেও এর চেয়ে তিন-চার শ কার্ড বেশি বিতরণ করা হয়েছে। এর ফলে লাইনের শেষে দাঁড়ানো বৈধ কার্ডধারীদের অনেকে পণ্য না পেয়ে ফিরে গেছেন।

বাঙাবাড়িয়া মহল্লার রূপভানু (৭০) ও হাতিগাড়া মহল্লার সামিরণ (৩৫) বলেন, আজ ভোর পাঁচটা থেকে সাত ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন পণ্য কেনার আশায়। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ানোয় গরমে কোনোভাবে টিকতে পারছিলেন না তাঁরা। এরপরও অনেকে পণ্য না পেয়ে ফিরে গেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পণ্য বিক্রির তদারককারী কর্মকর্তা বলেন, ‘অতিরিক্ত কার্ড বিতরণের কারণে ১০ থেকে ১২ জন বৈধ কার্ডধারী পণ্য না পেয়ে ফিরে গেছেন বলে খবর পেয়েছি। বারবার বলার পরও ডিলার জনবল কম আনায় পণ্য কিনতে আসা লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কয়েকজনকে অসুস্থ হতেও দেখেছি। বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’