কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ২৭ কিলোমিটার অংশে খানাখন্দ, ভোগান্তি

শুকনা মৌসুমে সড়কজুড়ে কুয়াশার মতো ধুলাবালু ওড়ে। আর বৃষ্টিতে থাকে কাদাপানি। যানজট তো নিত্যদিনের সমস্যা।

কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের ২৭ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা। পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ২২ জুন সদর উপজেলার সুহিলপুর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২৭ কিলোমিটার অংশ খানাখন্দে ভরা। কোথাও সড়কের পিচঢালাই উঠে গেছে, কোথাও সড়ক দেবে গেছে। আবার কোথাও চার লেন সড়কের কাজের জন্য চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। স্থানীয় লোকজন বলছেন, এবার ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়াবে এ বেহাল সড়ক।

২২ জুন সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের বিরাসার, পীরবাড়ি, ঘাটুরা, সুহিলপুর ও নন্দনপুর বিসিক এলাকায় সড়কে ছোট-বড় গর্ত। বৃষ্টি হওয়ায় সড়কজুড়ে পানি। সড়কের দুই পাশে পানি বেশি থাকায় গাড়িগুলো এক সারিতে সড়কের মাঝ দিয়ে চলছে। মাঝেমধ্যে কোনো ট্রাক এলে চাকার চাপে চারপাশে ছিটে পড়ছে নোংরা পানি।

মহাসড়কের বিশ্বরোড থেকে কুমিল্লা অভিমুখী শহর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার অংশে ভাঙন বেশি। সওজ দিনরাত কাজ করছে।
মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী প্রকৌশলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সওজ

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের নন্দনপুর বিসিক শিল্পনগরী, নন্দনপুর বাজার, সুহিলপুর, সুহিলপুর বাজার, ঘাটুরা, পুলিশ লাইনস, পীরবাড়ি, বিরাসার, ফুলবাড়িয়া, পৈরতলা, নয়নপুর, রামরাইল, সুলতানপুর, উজানিসার এলাকা অংশে ভাঙন বেশি। খানাখন্দ ও পিচঢালাই সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। 

ঘাটুরা এলাকার ইউনাইটেড কেয়ার ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজির শিক্ষক লিমন ভূঁইয়া বলেন, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কর্মস্থলে যেতে হয়। শুকনা মৌসুমে সড়কজুড়ে কুয়াশার মতো ধুলাবালু ওড়ে। আর বৃষ্টিতে থাকে কাদা। আর যানজট তো নিত্যদিনের সমস্যা।

ঢাকা থেকে সদর উপজেলার নন্দনপুরে ঈদ করতে এসেছেন দুই বোন জেসমিন আক্তার ও শিরিনা আক্তার। তাঁরা বলেন, সড়কজুড়েই খানাখন্দ আর ভাঙন। বাড়িতে ঈদ করতে এসে সড়কের দুরবস্থার জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

ঢাকাগামী তিশা পরিবহনের বাসচালক কবির হোসেন বলেন, ‘দুর্ভোগ নিয়েই আমাদের এই সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে। এই ভোগান্তি যে কবে শেষ হবে?’

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের মার্চ মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটারের চার লেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এর আওতায় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাঁটিহাতা বিশ্বরোড মোড় থেকে আখাউড়ার ধরখার পর্যন্ত ২৭ দশমিক ০৫ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক রয়েছে। 

সওজ সূত্র আরও জানায়, করোনা মহামারির পর থেকে নানা জটিলতায় চার লেন সড়কের প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলছে। সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ৩০-৩৫ হাজার যানবাহন চলাচল করছে। এর মধ্যে যাত্রীবাহী যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা-সিলেট ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৯টি স্থানে হাইওয়ের পুলিশের স্থায়ী দল রয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের বিশ্বরোড, নন্দনপুর, সুহিলপুর, ঘাটুরা এলাকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ভাদুঘর গরুবাজার, কুটি চৌমুহনী গরু বাজার এলাকায় হাইওয়ের পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। অন্যদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ রেলগেট বাজার, বেড়তলা এলাকায় স্থায়ী পুলিশের চৌকি করা হয়েছে। এ ছাড়া দুটি ভ্রাম্যমাণ দল এবং একটি মোটরসাইকেল দল কাজ করছে। 

সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সুলতানপুর, ভাদুঘর গরু বাজার, সুহিলপুর, ঘাটুরা, বিশ্বরোড মোড় ও বেড়তলাসহ বেশ কয়েকটি অংশে যানজট হওয়ার আশঙ্কা আছে। কিন্তু গতকাল সোমবার পর্যন্ত তেমন বড় ধরনের কোনো যানজট তৈরি হয়নি। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের বিশ্বরোড থেকে কুমিল্লা অভিমুখী শহর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার অংশে ভাঙন বেশি। সওজ দিনরাত কাজ করছে। সড়কের বেশ কিছু অংশে বিটুমিনের কাজ করা হয়েছে। কিন্তু চার লেন সড়কের জন্য পাশের রাস্তা উঁচু করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন অংশে নিচের রাস্তায় পানি চলে আসছে। যে কারণে বিটুমিন টিকছে না। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত চার লেন সড়কের একটি অংশ খুলে দেওয়া হয়েছে।