ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত, ভোগান্তি

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পাখিমারা থেকে মৎস্যবন্দর মহিপুর পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশে পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গাড়িগুলো এক পাশ দিয়ে চলাচল করছে। গত শুক্রবার সড়কের পাখিমারা বাজারেছবি: প্রথম আলো

বিআরটিসির বাসচালক মো. ইউনুস মুন্সীকে প্রায়ই পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে গাড়ি নিয়ে আসতে হয়। সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত। এতে বাস একটু পরপরই কাত হয়ে যায়। ইউনুসেরও বাস চালাতে বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হয়।

ইউনুস বলেন, ‘গাড়ি যে চালামু, হেই রহম অবস্থা নাই। রাস্তায় গর্ত আর গর্ত। একটা ট্রিপ দেলেই গাড়ির মেরামত করাইতে হয়। এই রাস্তাডা যে মানুষজন ব্যবহার করে, এই রাস্তা দিয়া যে গাড়ি চলে, হেইডা মনে হয় ওপরের মহলের খেয়ালে নাই।’

পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা বাজার থেকে মহিপুর ইউনিয়নের শেখ রাসেল সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ শুধু ইউনুস মুন্সীর একার নয়, নয়নাভিরাম সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা হাজারো পর্যটকসহ এলাকার সব মানুষের। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বছরের পর বছর ধরে এই সড়ক এভাবে পড়ে আছে। এর সংস্কার আদৌ হবে কি না, তা তাঁরা জানেন না।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশে পিচঢালাই উঠে গিয়ে ইট-সুরকি বের হয়ে গেছে। সড়কটিতে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। কোথাও কোথাও সড়কের একপাশ প্রায় দেবে গেছে। এর ফলে ভাঙা অংশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। অথচ সড়কে যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ অসংখ্য যানবাহনের ভিড়। গাড়িগুলো হেলেদুলে চলছে। আর গাড়ি চলাচলের সময় সড়কজুড়ে ধুলা উড়ছে।

পাখিমারা এলাকার বাসিন্দা ও কলেজশিক্ষক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন আমাকে এ সড়ক দিয়ে কলেজে যেতে হয়। মোটরসাইকেল চালিয়ে ঠিকই কলেজে যাই, কিন্তু ধুলাবালুতে হাত-পা-মুখ আর কাপড়চোপড় নষ্ট হয়ে যায়। ভাঙা সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়ার কারণে ঝাঁকুনিতে সারা শরীর ব্যথা হয়ে যায়। আমরা এলাকার মানুষ গত কয়েক বছর ধরে এ সড়কটি মেরামত করার দাবি জানিয়েছি। আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ কর্তৃপক্ষ নেয়নি।’

কুয়াকাটা পর্যটনের স্বার্থে সড়কটি দ্রুত সংস্কার বা নতুন করে সম্প্রসারণ করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কুয়াকাটায় আধুনিক হোটেল নির্মাণ করছে গোল্ডস্যান্ডস গ্রুপ। এর পরিচালক বাহার শাহদাত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে অনেকেই কুয়াকাটায় বিনিয়োগে আগ্রহী। ইতিমধ্যে অনেকে হোটেল-মোটেল নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছেন। তবে কুয়াকাটায় যাতায়াতে প্রধান সড়কটি বেহাল হওয়ায় তাঁরা হতাশ। কুয়াকাটার প্রতি মানুষের অনীহার বড় একটি কারণ হলো কুয়াকাটাগামী সড়কটির দুরবস্থা। বছরের পর বছর ধরে সড়কটি ভেঙে পড়ে আছে। অথচ এর সংস্কার বা মেরামতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। কুয়াকাটার স্বার্থের জন্য এ সড়কটি মেরামত করা জরুরি। নাহলে এ কুয়াকাটা ভালো পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা বাজার থেকে মহিপুর মৎস্য বন্দরের শেখ রাসেল সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশের উন্নয়নকাজ করে খুলনার দ্য রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তখন এর নির্মাণব্যয় ছিল ২০ কোটি টাকা।

কাজটি মানসম্মত না হওয়ায় তখন ঠিকাদারের আট কোটি টাকার বিল আটকে দেয় পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কর্তৃপক্ষ। সওজ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দুটি দল সরেজমিন তদন্তও করে। তদন্তকারী দলের পক্ষ থেকেও কাজের গুণগত মান ভালো হয়নি বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

সূত্রটি আরও জানায়, বিল আটকে দেওয়ার ঘটনায় দ্য রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম চূড়ান্ত বিল দাবি করে ২০১৪ সালে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলার কারণে সংস্কারকাজে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। এরপর আর বড় কোনো কাজ হয়নি এ সড়কে। তবে সওজ কর্তৃপক্ষ এ অংশে জরুরি মেরামতের কাজ করে।

পটুয়াখালী সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম আতিকুল্লাহ বলেন, পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কের সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়কটি নিয়ে আদালতে মামলা থাকায় এত দিন এর সংস্কারকাজ করা যায়নি। তবে উচ্চ আদালত এ সড়কের মামলার শুনানি শেষে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছেন। এখন আর এ সড়কের নির্মাণ বা মেরামতের জন্য কোনো বাধা নেই। ইতিমধ্যে সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ১৭ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছেন, আগামী মাসের মধ্যে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিতে পারবেন।