ইলিশের প্রজনন
খুঁটা জালে প্রজননে বাধা
প্রজননের সময় ডিম ছাড়ার জন্য মা ইলিশ মিঠাপানিতে প্রবেশ করতে গিয়ে ওই জালের বাধার মুখে পড়ছে।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকার বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর মোহনায় আড়াআড়িভাবে খুঁটা জাল পেতে রাখা হয়েছে। প্রজননের সময় ডিম ছাড়ার জন্য মা ইলিশ মিঠাপানিতে প্রবেশ করতে গিয়ে ওই জালের বাধার মুখে পড়ছে। এ বছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে এই সময়ে দেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়, বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
টেকসই উপকূলীয় সামুদ্রিক মৎস্য প্রকল্পের বরিশাল অঞ্চলের উপপরিচালক মো. কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পেতে রাখা খুঁটা জাল জেলেরা তুলেন না। ফলে জালের গায়ে শেওলা ও সামুদ্রিক শৈবালের প্রজনন ঘটে। এসব শৈবালের দৈহিক বৃদ্ধির কারণে জালের ফাঁস বন্ধ হয়ে যায় এবং পলি জমে চরের সৃষ্টি হয়। এতে ইলিশের প্রজননে বিঘ্ন ঘটে। সাগর ও নদ-নদীর মোহনায় খুঁটা জাল না পাতা ও পেতে রাখা খুঁটা জাল অপসারণের জন্য জেলেদের উদ্বুদ্ধ ও প্রচারণা চালানোর কথা বলেছেন তিনি।
সরেজমিন দেখা যায়, সাগর থেকে নদ-নদীতে প্রবেশ পথ মৌডুবির মায়ার চর, চর তালেব ও গ্যাপের চর এলাকায় সাগর মোহনায় আড়াআড়িভাবে খুঁটি পুঁতে রাখা হয়েছে। কয়েক মাস ধরে মোহনায় পুঁতে রাখা খুঁটির সঙ্গে জাল পেতে রাখা হয়েছে। এই জালে বিশেষ ধরনের ফাঁদ বা ঘোনা তৈরি করা হয়েছে। মোহনায় সারিবদ্ধভাবে পুঁতে রাখা খুঁটি ও ঘন সুতিজালে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ শিকার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ইলিশসহ অন্যান্য মাছ সাগর থেকে মিঠা পানিতে প্রবেশ পথে বাধা পেয়ে জালে আটকা পড়ছে। বড় আকারের মাছের সঙ্গে পোনা মাছও আটকা পড়ে।
মায়ার চরে একজন জেলেকে খুঁটি থেকে জাল ওপরে টেনে পরিষ্কার করতে দেখা যায়। নাম-পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেও তিনি উত্তর দেননি। মাছ ধরা পড়ছে কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও তেমন মাছ পাওয়া যায়নি। তবে এখন কিছু ইলিশ মাছ দেখা যাচ্ছে। ইলিশ এখন নদীতে প্রবেশ করবে। তাই প্রবেশ পথে জালে আটকা পড়ছে। তবে আটকে পড়া ইলিশের অধিকাংশের পেটেই ডিম রয়েছে। কারা খুঁটি পুঁতে জাল পেতেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু মাছ ব্যবসায়ী ও জেলে খুঁটা জাল পেতে মাছ ধরছে।
মায়ার চরের মাছ ব্যবসায়ী রুমান মিয়া ও মিজানুর রহমান বলেন, মৌডুবিতে তাঁদের মাছের আড়ত রয়েছে। জেলেরা তাঁদের কাছ থেকে দাদন নেয় এবং জাল-ট্রলার প্রস্তুত করে নদী-সাগর থেকে মাছ ধরে তাঁদের কাছেই বিক্রি করে। ইতিমধ্যে মা ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। তবে মোহনায় খুঁটা জালের সঙ্গে কারা জড়িত, তা তাঁরা জানেন না বলে দাবি করেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জেলে জানান, কিছু ব্যবসায়ী জেলেদের অর্থ সহায়তা দিয়ে এই মৌসুমে ইলিশ শিকারের জন্য মোহনায় খুঁটা জাল দিয়ে মাছ শিকারের সহায়তা করছে। তবে মোহনা থেকে খুঁটা জাল সরাতে না পারলে ইলিশের প্রজনন মৌসুমে এই মৌডুবি এলাকার মোহনায় প্রচুর মা ইলিশ মারা পড়বে।
পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক পিযুষ কান্তি হরি বলেন, প্রজননের সময় গভীর পানি ও প্রবল স্রোতে ইলিশ উজানে নেমে এসে মিঠা পানিতে প্রজননে অংশ নেয়। এ সময় জেলেদের জালে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়তে দেখা যায়। মা ইলিশ রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজাহারুল ইসলাম বলেন, কোনোভাবেই সাগরমোহনা কিংবা নদ-নদীতে খুঁটা জাল পেতে রাখা যাবে না। এখন ইলিশের প্রজনন মৌসুম। তাই ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে দ্রুত নদ-নদী, মোহনা থেকে খুঁটাজাল অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।