গ্রেপ্তারের সাড়ে নয় ঘণ্টা পর পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যু

যশোর জেলার মানচিত্র

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় পুলিশ হেফাজতে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। গতকাল শনিবার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে থানায় নেওয়া হয়।

ওই নারীর নাম আফরোজা বেগম (৪০)। তিনি উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের আবদুল জলিল মোল্যার স্ত্রী। আফরোজা বেগমের এক ছেলে অভিযোগ করে বলে, তাঁর মাকে পুলিশ মারধর করেছে। তাঁর চুল ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে তাঁর মাকে ঝুলিয়ে রাখা হয়।

পুলিশ জানায়, গতকাল রাত দেড়টার দিকে অভিযান চালিয়ে উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে আফরোজা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর কাছে ৩০টি ইয়াবা বড়ি পাওয়া যায়। অভিযানে উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে সহকারী উপপরদির্শক (এএসআই) সিলন আলী, এএসআই শামসুল হক ও নারী কনস্টেবল রাবেয়া খানম ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর আফরোজাকে থানাহাজতে রাখা হয়।

পুলিশ আরও জানায়, আজ সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে আফরোজা বেগম থানাহাজতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য দ্রুত তাঁকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর সুস্থ বোধ করলে তাঁকে থানায় ফিরিয়ে আনা হয়। সকাল পৌনে ১০টার দিকে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর আবার তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের ঘটনায় আজ সকালে আফরোজা বেগমের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ (১) ১০ (ক) ধারায় মামলা হয়েছে।

যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা হাসিব মো. আলী হাসান বলেন, বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে আফরোজাকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। কী কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলা যাবে।

আফরোজা বেগমের ছোট ছেলে নওয়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সাব্বির মোল্যা বলে, ‘গতকাল রাতে আম্মু বাড়ির পাশে পানি আনতে যান। এ সময় বাড়িতে পাঁচজন পুলিশ আসে। এর মধ্যে সিলন দারোগা (এএসআই সিলন আলী) আম্মুকে তাঁর কাছে যা আছে, বের করে দিতে বলেন। তাঁর কাছে কিছু নেই জানালে তিনি (সিলন আলী) একজন নারী পুলিশকে ফোন করে ডেকে আনেন। তিনি আম্মুর শরীর তল্লাশি করেও কিছু পাননি। এরপর সিলন দারোগা আম্মুকে চড় দিতে দিতে শোয়ায়ে ফেলেন। আম্মুকে মারতে নিষেধ করলে তিনি (সিলন দারোগা) আমাকেও দুটি চড় মারেন। এরপর আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে নারী পুলিশের সহায়তায় ঘরে দরজা দিয়ে কী করেছে, জানি না। তবে আমার সামনে চুল ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে আম্মুকে ঝুলিয়ে দিয়েছিল।’

আফরোজা বেগমকে নির্যাতন করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এএসআই সিলন আলী বলেন, আফরোজা বেগমকে মারধর বা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তাঁর পরিবারের সদস্যরা এটা বললে সেটা ঠিক বলছেন না। এই অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট|

আফরোজা বেগমের বড় ছেলে ইজিবাইকচালক মুন্না মোল্যা বলেন, ‘গতকাল রাতে পুলিশ কোথা থেকে এক লোককে ধরে এনে ২৩টি ইয়াবা বড়ি দিয়ে আম্মুকে বলে, “তুই দিয়েছিস।” এ সময় মায়ের কাছে টাকা দাবি করা হয়, না হলে মাকে ২০০ পিস ইয়াবা দিয়ে চালান করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। মাকে মারধরের পর রাত দুইটা–তিনটার দিকে পুলিশ তাঁকে অভয়নগর থানায় নিয়ে যায়। সকালবেলা মায়ের নাশতা দিতে থানায় গিয়ে শুনি, তাঁর শরীর খারাপ। প্রথমে তাঁকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে ওষুধ লিখে দেন এবং কিছু পরীক্ষা করতে দেন। কিন্ত পুলিশ তা করতে দেয়নি। পরে তাঁকে নিয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আসা হয়। গাড়িতে আমিও ছিলাম। পথে মায়ের শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। যশোর জেনারেল হাসপাতালে আনার পর জানতে পারি যে মা মারা গেছেন।’

অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আকিকুল ইসলাম বলেন, ৩০টি ইয়াবাসহ আফরোজা বেগমকে গতকাল রাত দেড়টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাতে তাঁকে মহিলা থানাহাজতে রাখা হয়। সকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে তাঁকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার পর তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসক বলেছেন, তাঁর উচ্চ রক্তচাপ ছিল। অস্বাভাবিক কোনো কিছু ঘটেনি। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে রয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।