হাটহাজারীতে পানিবন্দী মানুষের ঘরে খাবার দিল ‘মানবিক বাজার’

পানিতে তলিয়ে আছে সড়ক ও বসতঘর। চলছে না গাড়ি। বের হতে পারছে না বাসিন্দারাও। বসছে না সাপ্তাহিক হাটবাজারও। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকানেও কোমরপানি। এমন পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানবিক বাজারের সদস্যরা নৌকায় করে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন রান্না করা খাবার। গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এ দৃশ্য দেখা যায় চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পানিবন্দী দুই ইউনিয়ন শিকারপুর ও বুড়িশ্চরে।

গতকাল বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তরুণদের একটি দল নৌকায় করে প্রায় ৫০০ মানুষের কাছে রান্না করা খাবার পৌঁছে দিয়েছে বলে দাবি করেছে দলটি। শিকারপুর ও বুড়িশ্চর ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের সব কটি সড়ক ও বসতঘর কোমরপানিতে ডুবে গেছে। এমন কোনো সড়ক নেই, যেটা দিয়ে বাসিন্দারা বের হয়ে কাপ্তাই প্রধান সড়কে উঠতে পারেন।

মানবিক বাজারের মূল উদ্যোক্তা এরশাদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে অসংখ্য মানুষ শুকনা খাবার খেয়ে আছেন। এ জন্য আমরা নিজেদের অর্থায়নে উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম শিকারপুর, পূর্ব শিকারপুর, পশ্চিম বাথুয়া, বুড়িশ্চর ইউনিয়নের নজুমিয়াহাটসহ আরও কয়েকটি এলাকার পানিবন্দী মানুষের হাতে এক প্যাকেট করে রান্না খাবার তুলে দিয়েছি। এ সময় পার্শ্ববর্তী মাদর্শা ইউনিয়নের শ্যামা সুন্দরী স্কুল এলাকা ও ব্রাহ্মণহাটেও পানিবন্দী কয়েকটি ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়।

আমাদের কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীও এ কাজে সহযোগিতা করেছেন। সবজি ও মাংস দিয়ে ৫০০ মানুষের জন্য বিরিয়ানি রান্না করতে আমাদের প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’

হাটহাজারীর শিকারপুর ও বুড়িশ্চর ইউনিয়নের বাসিন্দারা বলেন, পাঁচ দিন ধরে দুই ইউনিয়নের ৯০ শতাংশ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থা ত্রাণসহায়তা বা খাবার নিয়ে আসেনি। গতকাল মানবিক বাজারই প্রথম খাবার বিতরণ করে তাদের এলাকায়।

২০২০ সালে করোনার সময় উপজেলার কয়েক তরুণ মিলে চালু করেন মানবিক বাজার। এ পর্যন্ত ৯৭টি হাট বসিয়ে বিনা মূল্যে চাল, ডাল, তেল, মুরগি, সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেছেন তাঁরা।

বুড়িশ্চর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহেদ হোসাইন ও শিকারপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দুই ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে পাঁচ দিন ধরে। পাকা, কাঁচা—সব ঘরেই এখনো কোমরসমান পানি। চুলা জ্বালাতে না পারায় শুকনা খাবার খেয়েই দিন পার করছেন তাঁরা। এর মধ্যে পানিবন্দী মানুষের জন্য মাঠে নেমেছে মানবিক বাজার। এটি একটি মহৎ উদ্যোগ।