আসামি না হয়েও জুলাই হত্যা মামলায় কারাগারে প্রবাসী, পাচ্ছেন না জামিন

ফেনীর প্রবাসী নজরুল ইসলাম হাজারী জুলাই আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামি নন, তবু ভুলবশত তাঁকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। বাবার নামের সঙ্গে আংশিক মিল থাকায় প্রকৃত আসামি যুবলীগ নেতা নুরুল হুদা ওরফে রিয়াদের পরিবর্তে প্রবাসী নজরুলকে আসামি বানানো হয়েছে বলে স্বজনদের দাবি। উচ্চ আদালত জামিন দিলেও রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতায় তিনি এখনো মুক্তি পাননি।

মামলার আসামি না হয়েও কারাগারে প্রবাসী নজরুল ইসলাম হাজারী। নজরুলের ফেসবুক থেকে নেওয়া।

ফেনীতে জুলাই আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামি না হয়েও প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে কারাবন্দী প্রবাসী নজরুল ইসলাম হাজারী ওরফে সাদ্দাম। গত ১৬ জুন ফেনী থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এরপর জুলাই আন্দোলনের দুটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে পাঠানো হয়।

পরিবারের দাবি, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেনের অনুসারী স্থানীয় এক ছাত্রদল কর্মীকে মোটরসাইকেল না দেওয়ায় প্রবাসী নজরুলকে আসামি বানিয়ে র‍্যাবকে ভুল তথ্য দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে। দুটি হত্যাচেষ্টা মামলায় নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে রিয়াদ হিসেবে। অথচ প্রকৃত আসামি মো. নুরুল হুদা ওরফে রিয়াদ ফেনী পৌর যুবলীগের সহসম্পাদক। তিনি বর্তমানে দেশে নেই। তাঁর বাবার নামের সঙ্গে নজরুলের বাবার নামের আংশিক মিল রয়েছে।

নিম্ন আদালতে একাধিকবার নজরুলের আইনজীবী বিষয়টি উত্থাপনের পরও জামিন হয়নি। পরে উচ্চ আদালতেও জামিনের আবেদন করেন তাঁরা। আদালত জামিনও দেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতার কারণে স্থগিত হয় তাঁর জামিন।

সৌদিপ্রবাসী নজরুল ইসলাম হাজারীর বাড়ি ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবুল খায়ের মিন্টু হাজারী। অন্যদিকে ২০২৪ সালের জুলাই মাসের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দুটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ফেনী পৌর যুবলীগের সহসম্পাদক মো. নুরুল হুদা ওরফে রিয়াদের বাড়ি মধ্যম ধলিয়া গ্রামে। বাবার নাম আবুল খায়ের। স্বজনেরা বলছেন, রিয়াদের বাবার নামের সঙ্গে মিল থাকায় নজরুলকে মামলার আসামি বানানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা নুরুল হুদা ওরফে রিয়াদ ফেনী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুশেন চন্দ্র শীলের সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি সৌদি আরব চলে যান বলে তাঁর পরিবারও স্বীকার করেছে। কিন্তু র‍্যাব বলছে, গ্রেপ্তার নজরুলই রিয়াদ। এ নিয়ে কথা হয় নুরুল হুদার বোনের স্বামী আবদুর রহিমের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তাঁর শ্যালক রিয়াদ সৌদি আরব চলে যান। বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন। জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন শত্রুতাবশত আমার শ্যালককে বৈষম্যবিরোধী হত্যাচেষ্টার দুটি মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। তিনি ঘটনার সময় ওই স্থানে উপস্থিত ছিলেন না।

‘ছোট ভাই গ্রেপ্তারের পর আমরা আদালত, আইনজীবী ও পুলিশে সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই কারাবন্দী ভাইকে মুক্ত করার কোনো উপায় মেলেনি। গত ২৪ আগস্ট উচ্চ আদালতে জামিন পেলেও ২৬ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করায় আমার ভাই মুক্তি পাননি।’
ফেরদৌস আরা, প্রবাসী নজরুলের বড় বোন

যা আছে মামলার এজাহারে

যে দুই মামলায় নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তার একটির বাদী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের হাফেজ আহমদের ছেলে মহিউদ্দিন (৩৪)। অপরটির বাদী ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের শাহাদাত হোসেনের ছেলে আফসার হোসেন ওরফে মহিন (৩১)। তাঁরা দুজনই যুবদলের কর্মী বলে জেলা যুবদলের সভাপতি নাসির উদ্দিন খন্দকার নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলার বাদী মহিউদ্দিন ও আফসার হোসেন বর্তমানে যুবদলের কোনো পদ পদবিতে নেই। তবে তাঁরা যুবদলের কর্মী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহিউদ্দিন ও আফসার দুজনই যুবদল নেতা জাকির হোসেন ওরফে জসিমের অনুসারী।

গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর মহিউদ্দিন বাদী হয়ে ফেনী সদর মডেল থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। ওই মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহিপাল এলাকায় অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন মহিউদ্দিন। এ সময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে মহি উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয় ১৫৫ জনকে। এজাহারভুক্ত ১৪ নম্বর আসামির নাম রিয়াদ (৩৪)। যার বাবার নাম মৃত আবুল খায়ের, ঠিকানা মাধ্যম ধলিয়া, ফেনী সদর।

ফেনী পৌর যুবলীগের সহসম্পাদক নুরুল হুদা ওরফে রিয়াদ। তাঁর নামে হওয়া হত্যা চেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় নজরুলকে
ছবি: রিয়াদের ফেসবুক থেকে

যুবদলের কর্মী আফসার হোসেন হত্যাচেষ্টার মামলা করেন ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর। মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শহরের ট্রাংক রোডের বড় মসজিদ এলাকায় অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন আফসার হোসেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ওই হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয় ১৮৫ জনকে। মামলার এজাহারভুক্ত ৩৬ নম্বর আসামির নাম রিয়াদ (৩২)। বাবার নাম মৃত আবুল খায়ের, ঠিকানা মাধ্যম ধলিয়া ফেনী সদর।

দুই মামলায় যে রিয়াদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, প্রবাসী নজরুলকে সে ব্যক্তি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে স্বজনদের দাবি। অথচ আসামি রিয়াদ ফেনীর রাজনৈতিকভাবে পরিচিত মুখ।

‘আইন মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, নিরপরাধ কোনো ব্যক্তিকে যেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলায় আসামি করা না হয়। এরপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মন্ত্রণালয়ের আদেশ মানছেন না। অন্যদিকে, নিরপরাধ কোনো ব্যক্তিকে নির্যাতন না করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলীয় নেতা-কর্মীদের বারবার নির্দেশনা দিলেও অনেকে তা শুনছেন না।’
মেজবাহ উদ্দিন খান, সরকারি কৌঁসুলি, ফেনী জেলা জজ আদালত।

গ্রেপ্তার নজরুলই রিয়াদ, দাবি র‍্যাবের

র‍্যাব-৭ ফেনী ক্যাম্পের অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার মো. মিজানুর রহমানের কাছে মূল আসামির পরিবর্তে প্রবাসীকে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রিয়াদকে (নজরুল ইসলাম হাজারী) আমরা গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তারের পর মামলার বাদী আমাদের (র‍্যাব) নিশ্চিত করেছেন তিনিই প্রকৃত রিয়াদ। এ ছাড়া পুলিশের থেকেও তথ্য নিশ্চিত হয়েছি গ্রেপ্তার রিয়াদ এজাহারভুক্ত আসামি। পরে আমরা আসামিকে পুলিশে হস্তান্তর করি।’ বিস্তারিত জানতে প্রতিবেদককে মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।

বিষয়টি জানতে চাইলে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি তিনি শুরুতে অবগত ছিলেন না। কারাবন্দী ওই প্রবাসীর স্বজনেরা সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন
ফেনীর যুবদল নেতা জাকির হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

আসামি বাছাইয়ে যুবদল নেতা

গত ৩ অক্টোবর প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত ‘মামলা নিয়ে বহুস্তরের বাণিজ্য, জড়িত রাজনীতিক, পুলিশ’ শিরোনামে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক এখন পর্যন্ত ফেনীতে মামলা হয়েছে ২২টি। এর মধ্যে ৭টি হত্যা ও ১৫টি হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা। এসব মামলায় ২ হাজার ১৯৯ জন এজাহারভুক্ত এবং প্রায় ৪ হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছেন।

সাতটি হত্যা মামলার বাদী সরাসরি নিহত ব্যক্তির পরিবার। তবে এই মামলাগুলোর আসামি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। এর মধ্যে যুবদলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেনের নাম উঠে এসেছে। হত্যাচেষ্টার যত মামলা ফেনীতে হয়েছে, এর বেশির ভাগেরই বাদী জাকিরের অনুসারী বলে স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে।

তবে জাকির হোসেন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, একটা মামলা হলে জেলা বিএনপির নেতারা নিজেদের মতো করে আসামি দেন। এখানে বাণিজ্যের কিছু নেই। ভুল হলে পুলিশ তদন্ত করে বাদ দিয়ে দেবে। জাকির হোসেন মামলা-বাণিজ্যে জড়িত থাকার কথাও অস্বীকার করেন। তাঁর দুই সহচর দুটি মামলার বাদী হয়েছেন বলে স্বীকার করেন তিনি। তাঁর দাবি, আওয়ামী লীগের দলীয় পদ নেই, এমন কাউকে আসামি করা হয়নি।

নজরুলের পরিবারের অভিযোগ

নজরুল ইসলাম হাজারীর মেজ ভাই জহিরুল ইসলাম ফাহাদ হাজারী বলেন, যুবদল নেতা জাকির হোসেন তাদের প্রতিবেশী। এলাকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাকিরের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল। জাকিরের অনুসারী যুবদল কর্মী মহিউদ্দিন ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট নজরুলের কাছে তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি চেয়েছিলেন। সেটি না দেওয়ায় মহিউদ্দিন নজরুলকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসান।

জহিরুল ইসলাম ফাহাদ হাজারী আরও বলেন, জাকির হোসেনের শ্বশুরপক্ষের লোকজনের সঙ্গে তাঁদের জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। তবে সেই বিরোধের কারণে হামলার বাদী মহিউদ্দিনকে দিয়ে নজরুলকে গ্রেপ্তার করিয়েছেন কি না, সে বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত নন।

জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, প্রবাসী নজরুল ইসলাম হাজারীর পরিবারের সঙ্গে তাঁর পরিচয় রয়েছে। তবে নজরুল ইসলাম কোনো মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন কি না, তিনি জানেন না। জমি–সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

মামলাগুলোর আসামি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। এর মধ্যে যুবদলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেনের নাম উঠে এসেছে। হত্যাচেষ্টার যত মামলা ফেনীতে হয়েছে, এর বেশির ভাগেরই বাদী জাকিরের অনুসারী বলে স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে।

জানতে চাইলে একটি মামলার বাদী মহিউদ্দিন বলেন, আসামি এলাকায় রিয়াদ নামে পরিচিত। র‍্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে স্বীকার করলেও র‍্যাবের সঙ্গে আসামি শনাক্তের বিষয়ে কোনো রকম যোগাযোগ হয়নি বলে তিনি দাবি করেছেন।

মহিউদ্দিনের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন বলেন, মামলার বাদী নিজেই আসামিকে শনাক্ত করে র‍্যাবের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করিয়েছেন। মামলার বাদী গ্রেপ্তার আসামিকে প্রকৃত রিয়াদ বলেও নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া রিয়াদের নাম আরও একটি মামলার এজাহারে থাকায় সেই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

অপর হত্যাচেষ্টা মামলার বাদী আফসার হোসেন বলেন, ‘আমার মামলার কোনো আসামিকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করেছে কি না, আমি জানি না। আমার মামলার বেশির ভাগ আসামি বিএনপির সিনিয়র নেতারা ঠিক করে দিয়েছেন। যদি কোনো নিরীহ ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়ে থাকেন, আমি আশা করব, তিনি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি পাবেন।’

জামিনের বিরোধিতা রাষ্ট্রপক্ষের

নজরুলের বড় বোন ফেরদৌস আরা বলেন, নিম্ন আদালতে নজরুলের জামিন পেতে ব্যর্থ হয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘ছোট ভাই গ্রেপ্তারের পর আমরা আদালত, আইনজীবী ও পুলিশে সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই কারাবন্দী ভাইকে মুক্ত করার কোনো উপায় মেলেনি। গত ২৪ আগস্ট উচ্চ আদালতে জামিন পেলেও ২৬ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করায় আমার ভাই মুক্তি পাননি।’

ফেনী জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পাবলিক প্রসিকিউটর) ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজবাহ উদ্দিন খান বলেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, নিরপরাধ কোনো ব্যক্তিকে যেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলায় আসামি করা না হয়। এরপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মন্ত্রণালয়ের আদেশ মানছেন না। অন্যদিকে, নিরপরাধ কোনো ব্যক্তিকে নির্যাতন না করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলীয় নেতা-কর্মীদের বারবার নির্দেশনা দিলেও অনেকে তা শুনছেন না।

আরও পড়ুন

মেজবাহ উদ্দিন খান আরও বলেন, ‘কারাবন্দী প্রবাসীর জামিনের বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি জেলা জজের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। জেলা জজ আদালত থেকে জামিন না হওয়ায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। তাঁরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও রাষ্ট্রপক্ষ কেন বিরোধিতা করেছে, এটি আমার জানা নেই।’

জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান কিংবা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলাগুলো স্পর্শকাতর হাওয়ায় কোনো আসামি যেন জামিনে বের হতে না পারেন, সে জন্য ডেপুটি কমিশনার ফেনীর পক্ষে উচ্চ আদালতের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের নিযুক্ত আইনজীবীরা জামিনের বিরোধিতা করেন। প্রবাসী নজরুলের জামিন আবেদনের বিষয়টি যে বিরোধিতা করা হয়েছে, আমি সেটি জানি না।’